অনলাইন ডেস্কঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের আবাসিক সংকট, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও বাংলা একাডেমির সাবেক পরিচালক ইতিহাসবিদ ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, ঐকান্তিক এবং শিক্ষকসূলভ মানসিকতা থাকলে সব সমস্যাই সমাধান করা যাবে। আর শিক্ষার্থীদেরও শিক্ষার্থীদের মতো আচরণ করতে হবে। কারণ রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হচ্ছে জ্ঞান সৃষ্টি করা। আর এই জ্ঞান সৃষ্টির কারিগর শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
কাজেই দুইজনের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত আর এখন কী আছে সেটি বিবেচনা করা দরকার।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে এসব কথা বলেন তিনি। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবনমান: নিরাপদ আবাসন, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত চিকিৎসা প্রসঙ্গ’ র্শীষক এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজামান।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি একসময় এগারো দিনের জন্য বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ ছিলাম।
তৎকালীন উপাচার্যের সাথে পাঁচ দফা চুক্তির ভিত্তিতে আমি সেই হলের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। দেখলাম তিনদিনের মধ্যে তিনি একের পর এক শর্ত ভাঙতে শুরু করলেন। এগারো দিনের মাথায় আমি প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব ছেড়ে দিলাম।
তিনি আরও বলেন, প্রাধ্যক্ষ থাকাকালীন প্রথম অভিযোগ পেলাম, খাবারের মান খুবই নিচু।
হাউস টিউটরদের সাথে আলোচনা করে দেখলাম আরেকটি ডাইনিং হল আছে, যেখানে ক্যাটারার খাবার দিচ্ছে। আমি আরেকটি ক্যাটারারের ব্যবস্থা করতে বললাম। দেখা গেল, নতুন ক্যাটারারের খাবারের মান উন্নত। শিক্ষার্থীরা তার দিকে ঝুঁকতে শুরু করলো। এভাবে খাবারের সমস্যার সমাধান করেছি।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসকদের ‘দ্যা আইডিয়া অব অ্যা ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি বই পড়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসকেরা সমস্যা সমাধানে নিশ্চয়ই চেষ্টা করবেন। তবে আমাদের দেশে সমস্যা সংকট আছে। এটির বাইরে তো আর বিশ্ববিদ্যালয় নয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির আজকের আলোচনার বিষয়বস্তুর সাথে টেকশই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বিষয়গুলোর মিল আছে। আমি আশা করি সাংবাদিক সমিতি টেকশই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন ও অর্জনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে এবং আমাদের ছাত্র-সাংবাদিকরা সর্বোচ্চ যত্ন ও প্রচেষ্টার সাথে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কাজ করে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম তখন আমাদের প্রতিদিনের ইফতারের জন্য ২-৩ টাকা বরাদ্দ থাকত। আর আজকের এই ইফতার মাফফিলের আয়োজনে মাথাপিছু কমপক্ষে ১২৫ টাকা করে খরচ করা হয়েছে। যা কিনা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম একটি নির্দেশক।
অনুষ্ঠানে সমিতির সভাপতি মামুন তুষারের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইঁয়া বক্তব্য রাখেন। সঞ্চালনা করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম রুবেল।
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল বলেন, খাবারের মান নিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার অনেক বিষয় আছে। তবে নিরাপদ আবাসনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেওয়া মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হলে সমস্যা আর থাকবে না। আমাদের ক্যান্টিনগুলোতে যেন হাইজেনিক খাবার পরিবেশন করা যায়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বলেছে। আর উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাদের মেডিকেল সেন্টারকে যেন আরও উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেছি।
অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন বলেন, সরকার আমাদের যে পরিমাণ অর্থ সহায়তা প্রদান করে তার ভেতরে থেকেই আমাদের কাজ করতে হয়। আমরা চাইলেও বাইরে থেকে ফান্ড এনে অনেক কিছু করে ফেলতে পারবো, সেরকম চাইলেও হয় না। তারপরও আমি মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করছে যেন অপ্রতুল সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করে ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা নিশ্চিত করতে পারি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক লুুৎফর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ এবং ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।