সীতাকুণ্ড পাহাড় হতে প্রবাহিত পানির ঝিরিতে জিপিএইচ ইস্পাাতের বাঁধ নির্মান: জীব বৈচিত্র হুমকীর মুখে
মাহমুদ আরাফ মেহেদী । ।
সীতাকুণ্ডে পাহাড় হতে প্রবাহিত পানির ঝিরিতে বাঁধ নির্মান করেছে জিপিএইচ ইস্পাত কারখানা। বন বিভগের জায়গা দখল করে ঝিরিতে বাঁধ নির্মান করায় এলাকা জুড়ে দেখা দিয়েছে পানি সংকট। ফলে পানির অভাবে প্রাণীকুল হুমকীতে পড়ে বিলুপ্তির মুখে পড়েছে জীব বৈচিত্র ও আধিবাসী সম্প্রদায়ের কয়েক’শ পরিবার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের সুলতানা মন্দির এলাকায় পাহাড়ের গভীর অরন্যে ঝিরির মুখে বাঁধ তৈরী করে পানির গতি পথ পরিবর্তন করে জিপিএইচ ইস্পাত কারখানার দিকে করে নিয়েছে। পাহাড় কেটে বালুর বস্তায় ভরে বাঁধ নির্মানের ফলে এলাকাজুড়ে তৈরী হয়েছে তীব্র পানি সংকট। আর পানি সংকটের কবলে পড়ে আদিবাসী কয়েক’শ পরিবার ও বন ভূমিসহ প্রাণীকূল হুমকীতে পড়ায় ভবিষ্যতে বনাঞ্চল রক্ষা কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলে আশংকা করেছেন স্থানীয় বন বিভাগ।
কুমিরা রেঞ্জের কর্মকর্তা গাজী মনিরুজ্জামান বলেন,‘ বন বিভাগের জায়গায় প্রায় ৩-৪’শ শ্রমিক জবর দখল করে বস্তাবর্তী বালি, দিয়ে ঝিরিতে বাঁধ তৈরী করা হয়েছে। এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে বাঁধ নিমানে বাঁধা প্রদান করা হলে কর্মরত শ্রমিকদের হুমকি-দমকিতে পড়তে হয়েছে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ফলে বাঁধা প্রদানে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন বন কর্মকর্তারা।
পরে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনে উপজেলা প্রশাসনের বরাবরে লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান বন বিভাগের এই কর্মকর্তা।
এদিকে, বন বিভাগের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রায় এক মাস পর উপজেলা প্রশাসেনের পক্ষ হতে সরেজমিনে ঘটনার তদ্বন্ত করা হয়।
কিন্তু নির্মানাধীন বাঁধের সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বনবিভাগের সম্পৃক্ততা থাকার কারনে বাঁধটি অবমুক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে জানান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ মাহবুবুল হক। এ অবস্থায় সমস্যা জটিল আকার ধারন করে পানি সংকটে পড়ে উচ্ছেদের কবলে পড়েছে বসবাসরত উপজাতি পরিবার ও জুম চাষীরা।
স্থানীয় পাহাড়ী জুম চাষীরা বলেন,‘ পাহাড় হতে নির্গত ঝিরির পানিতে চাষাবাদ হয়ে থাকে বিভিন্ন প্রকার শাক- সবজি ।কিন্তু ঝিরির পানি জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় ব্যবহার করতে বাঁধ নির্মান করে পরিবর্তন করা হয়েছে ঝিরির গতি পথ।
এ পরিস্থিতিতে পানির অভাবে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেলে জুম নির্ভর কয়েক’শ চাষীকে টানতে হবে বেকারত্বের ঘানি।
অন্যদিকে, জমানো পানি কারখানায় ব্যবহারের উদ্দেশ্য ঝিরির গতি পথ পরিবর্তন করে বাঁধ নির্মানের জন্য কেটে ফেলা হয়েছে একাধিক পাহাড়ের টিলা।
এতে করে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে হুমকিতে পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। তবে কারখানার সুবিধার্থে ক্রয়কৃত জায়গার উপর নির্মিত হয়েছে বাঁধ, সে সাথে সকল আইন মেনে বাঁধের কাজ চলছে বলে জানান, জিপিএইচ ইস্পাত কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমাস শিমুল।
তবে বাঁধ নির্মানে কোন রকম ছাড়পত্র পেয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আলমাস শিমুল বলেন আমাদের বাঁধের সাথে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের সাথে কোন সম্পর্ক নেই, তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড হতে আমরা ছাড়পত্র পেয়েছি। অথচ আইন মেনে বাঁধ নির্মানের কথাটি কোম্পানির পক্ষ হতে বলা হলেও তা অস্বীকার করে চলেছেন বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।
তবে ছাড়পত্র দিয়েছে কিনা তা জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, কোন প্রতিষ্ঠানকে বাঁধ নির্মানের অনুমতি বা ছাড়পত্র দেওয়ার কথাটি বানোয়াট, বর্তমান সরকারের নির্দেশ রয়েছে কোন পাহাড়ি ঝিরি বা কোন জলধারা উপর যদি কোন বসত বাড়িও নির্মান হয় তা ভেঙ্গে আগের স্থানে নিয়ে আসা, আমরা কাউকে বাঁধ নির্মানের ছাড়পত্র দেইনি, তবে জিপিএইচ ইস্পাত এর পক্ষে আমাদের কাছে একটি আবেদন করেছেন, কিন্তু পাহাড়ি ঝিরিতে বাঁধ নির্মানের ছাড়পত্র দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, পাহাড়ি ঝিরিতে বা যে কোন বাঁধ নির্মানে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র লাগে, আর আমরা কখনই কোন পাহাড়ি ঝিরিতে বাঁধ নির্মানের অনুমতি বা ছাড়পত্র দেয়নি। যদি কেউ পাহাড়ি ঝিরিতে বাঁধ নির্মান করে, তাহলে স্বরেজমিনে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।