স্বপ্নের ঘর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা গৃহহীন ২৫ পরিবার
-

অনলাইন ডেস্কঃ

হাজেরা খাতুন সত্তরোর্ধ্ব বয়সেও ঝাড়ুদারের কাজ করেন অন্যের বাড়িতে। স্বামী মারা গেছে এক যুগ আগে। এক মেয়ে সন্তান ছিল বিয়ে দিয়েছিলেন। দুই সন্তান রেখে সে মেয়েও বিধবা হয়ে যায়।

তিনি জানান, ঝাড়ুদারের কাজ করি আর আমার মেয়ে বাড়ি বাড়ি কাজ করে। থাকতাম অন্যের বাড়িতে। আজ পাকা ঘরে উঠেছি। জীবনে কখনো ভাবতেই পারিনি নিজের পাকা ঘরে শুয়ে মৃত্যুবরণ করব।

আমার নাতিদেরও একটা অবলম্বন হলো। কত বৃষ্টিতে আরেকজনের বারান্দায় রাত কাটিয়েছি তা জানা নেই। আজ আমি ঘরের মালিক। শেখ হাসিনার জন্য আমি ঘরের মালিক হয়েছি।

এভাবেই কান্না জড়িত কণ্ঠে নিজের আবেগের কথা বলেন বৃদ্ধা হাজেরা খাতুন।

৩য় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহের ত্রিশালে ২৫ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মত ওই হাজেরা খাতুন পেলেন নতুন ঠিকানা। আশ্রয় পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হাজেরা খাতুন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, এ ঘরে মরতে পারব ভাবতেই পারিনি।  

ত্রিশাল উপজেলায় তিন ধাপে ১১৫ জন গৃহহীন নতুন ঘর পেয়েছে। তৃতীয় ধাপে উপজেলা ২৫ জন গৃহহীন নতুন ঘরে উঠার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে আশ্রয়ন প্রকল্প-৩ এর অধীণে ত্রিশাল উপজেলার মোক্ষপুর ইউনিয়নের ১৩ জন ও কানিহারী ইউনিয়নের ১২ জনসহ মোট ২৫ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার তালিকাভুক্ত হন। ওইসব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য জমি ও গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয় জানুয়ারিতে। এবার ঈদুল ফিতরের আগেই ঘরগুলোর মালিকানা হস্তান্তর করে তাদেরকে উঠিয়ে দিবে। ইতোমধ্যে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

সরেজমিন উপজেলার মোক্ষপুর ইউনিয়নের মোক্ষপুর গ্রামের প্রকল্প ঘুরে কথা হয় ঝাড়ুদার হাজেরা খাতুন, দিনমজুরের স্ত্রী রমিজা, ভিক্ষুক আনোয়ারা, সাজেদা, হেনা আক্তার সহ অনেকের সঙ্গে। জীবন সংগ্রামে কতটা অসহায় ও মানবেতর দিন যাপন করেছেন তার বর্ণনা দুর্বিসহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ উপহার তাদের জীবনে এসেছে নতুন দিগন্ত। কখনো কল্পনাও করেনি পাকা দালানে বসবাস করবে জীবনের এই অন্তিম মুহূর্তে। যেখানে সারাজীবন কেটেছে অন্য বাড়ির বারান্দায় মাটিতে তারা আজ উঠেছে পাকা দালানে। এ যেন  আকাশ কুসুম কল্পনার বাস্তবায়ন।

ঘর পেয়ে নিজেদের ঘর গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। নিজের মত সাজিয়ে নিচ্ছেন উপহার পাওয়া নিজের ঘরগুলো। এর আগে সবাইকে জমির মালিকানার দলিল হস্তান্তর করে তাদেরকে বুঝিয়ে দেয় উপজেলা ভূমি অফিস।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাছান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, অসহায় ভূমিহীন যাদের ঘরবাড়ি কিছুই নেই তাদেরকে দুই শতাংশ জমির উপর আধাপাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি খাস জমি লিজ দিয়ে তাদের নামে নামজারিসহ কাগজপত্র বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

ভিক্ষুক হেনা আক্তার বলেন, স্বামী হারিয়ে ভিক্ষা করেই এক পেট চালিয়েছি। থাকার কোন ঘর সহায় সম্বল ছিল না। ভাইয়ের বাড়িতে থাকতাম। সেখানেও নিজের ঘর ছিল না। থাকতাম রান্না ঘরে। আজ ঘর পেয়েছি। স্যারেরা আমাকে খোঁজে এনে আমার নামে জমি লিখে দিয়ে পাকা দালান করে দিয়েছে। এই পাকা ঘরের চিন্তা জীবনেই স্বপ্নে দেখিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যে ত্রিশাল উপজেলায় দুই ধাপে ১০৫ জন গৃহহীন তাদের আবাসস্থলে বসবাস করছে। তৃতীয় ধাপে আমরা ২৫ জন গৃহহীনকে মালিকানা হস্তান্তর করে বাড়িতে উঠিয়ে দেয়ার সমস্ত কাজ সম্পন্ন করেছি। আগামী ২৬ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে এ উদ্বোধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অসহায়দের গৃহহীনদের জন্য ঈদ উপহার।