সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার
বনরক্ষীদের সঙ্গে সিন্ডিকেটের গোপন আঁতাত, জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে

অনলাইন ডেস্কঃ

প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগ এলাকায় বিষ দিয়ে মাছ শিকারের মহোৎসব চলছে। বনরক্ষীদের সঙ্গে আঁতাত করে নদী-খালে বিষ দেওয়ার ফলে বড় ও ছোট প্রজাতির মাছ, ডিমওয়ালা মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়াসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ মারা যাচ্ছে। এতে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। জানা যায়, বুধবার ভোররাতে সুন্দরবনে খালে বিষ দিয়ে শিকার করা সাড়ে ৩৭ মণ চিংড়িসহ সাতজনকে কয়রা মাদারবাড়িয়া বটতলা থেকে স্থানীয়রা আটক করে প্রশাসনে হস্তান্তর করেন।

এর আগে ২৯ জুন বিষ দিয়ে ধরা ৮৬ কেজি চিংড়িসহ আরও দুজনকে মদিনাবাদ মডেল মাধ্যমিক স্কুলের সামনে থেকে আটক করা হয়। তাদের ৬৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ২৭ জুন সুন্দরবনে খুলনা রেঞ্জের বজবজায় বিষ দিয়ে ধরা ৭০ কেজি চিংড়ি, তিন বোতল বিষ, নৌকা, ভেসাল জালসহ নুরুজ্জামান গাজী নামে একজন আটক হন। একই দিন ৫ নম্বর কয়রায় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বিষ দিয়ে ধরা ৪০ কেজি চিংড়ি ফেলে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায়।

সুন্দরবনের নদী-খালে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রজননকালে মাছ শিকার নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। কিন্তু নিষিদ্ধ সময়ে শুধু কয়রায় বিষ দিয়ে ২ কোটি টাকার বেশি মাছ শিকারের টার্গেট নেওয়া হয়েছে। এ সিন্ডিকেটে বনরক্ষী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও মাছ ব্যবসায়ীরা জড়িত। কয়রার কাঠকাটার মনোরঞ্জন মন্ডল জানান, হিরণ পয়েন্ট থেকে কাঠকাটা পর্যন্ত বিভিন্ন খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরা হয়।

বনরক্ষীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরা এভাবেই মাছ ধরে। এ মাছ নির্ধারিত দোকানগুলোয় তারা এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে। অভিযানে ধরা পড়লে কয়েক হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে আবারও একইভাবে বিষ দিয়ে মাছ ধরা শুরু করে। কয়রার মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, একবার খালে বিষ দিলে দুই মাসেও ওই খালে কোনো মাছ জন্মে না। তিনি বলেন, গতকাল ভোরে কয়রা মাদারবাড়িয়া বটতলা থেকে বিষ দিয়ে ধরা সাড়ে ৩৭ মণ চিংড়িসহ সাতজনকে আটক করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে জেলেরা এ মাছ ব্যবসায়ী লুৎফর রহমানের বলে জানান। পরে জব্দ মাছ বিনষ্ট করা হয়। এদিকে ওই মাছ ধরিয়ে দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে কয়রা আদালত চত্বরে দুপুরে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদকে মারধর করা হয়। কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান বাহারুল ইসলামের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয় বলে আবদুল্লাহ আল মাহমুদ অভিযোগ করেন। মাছ ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান সদর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান। আবদুল্লাহ আল মাহমুদ অভিযোগ করেন, এরাই বিষ দিয়ে মাছ শিকার সিন্ডিকেটের মূল হোতা।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান বাহারুল ইসলাম বলেন, তাকে অন্যায়ভাবে দোষ দেওয়া হচ্ছে। বিষ দিয়ে মাছ শিকার সিন্ডিকেটে বনরক্ষী, জনপ্রতিনিধি, এমনকি স্থানীয় সাংবাদিক, মাছ ব্যবসায়ীরা জড়িত। বনরক্ষী ও পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে বন থেকে একটা পাতাও আনা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রতি রাতে এখানে ১০-১২ লাখ টাকার চিংড়ি বিষ দিয়ে মারা হয়। এখানে বড় ধরনের চক্র আছে। কারা কারা এর সঙ্গে জড়িত এ তথ্য উদ্ঘাটন করা প্রয়োজন। এখানে ফরেস্টারদের ফাঁকি দিয়ে শহরে মাছ তোলা কারও পক্ষে সম্ভব নয়।