জাহান্নামের আগুন থেকে পরিবারকে বাঁচান
-

মোঃআমিনুল ইসলামঃ

সুরা আত্ তাহরিমে আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ!তোমরা নিজেদের ও পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর আগুন থেকে। যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে কঠোর স্বভাব ও নির্মম হৃদয়ের ফেরেশতা, যারা অমান্য করে না আল্লাহ যা আদেশ করেন। ’ আয়াত ৬।

এ আয়াতে সাধারণ মুসলমানদের উদ্দেশ করে বলা হয়েছে তারা যেন নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করে। এরপর জাহান্নামে নিয়োজিত ফেরেশতাদের আচরণ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে তারা অত্যন্ত কঠোর ও দয়ামায়াহীন এবং তারা তাদের প্রতিপালকের আদেশ পালন করতে কোনোরকম শৈথিল্য প্রদর্শন করবে না। এ ফেরেশতাদের নাম ‘জাবানিয়া’।

আল্লাহর আজাব থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর মধ্যেই কোনো মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য সীমাবদ্ধ নয়।

তিনি যে পরিবারের কর্তা তার দায়িত্ব হলো পরিবারের সব সদস্য যেন আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সে ব্যাপারে সাধ্যমতো শিক্ষা দেওয়া এবং সেভাবে তাদের তৈরি করা। পিতা-মাতার দায়িত্ব হলো তাদের সন্তানকে হজরত লোকমানের মতো উপদেশ দেওয়া, যা তিনি তার ছেলেকে দিয়েছিলেন। 

সুরা লোকমানের ১৩ থেকে ১৯ নম্বর আয়াত পর্যন্ত আল্লাহ তা আমাদের জন্য সুন্দরভাবে বিবৃত করেছেন। সংক্ষেপে তা হলো, ‘আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা, পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করা, পিতা-মাতা আল্লাহর সঙ্গে শিরক করতে পীড়াপীড়ি করলে তা না মানা, পাপ-পুণ্য যদি সরিষার দানার সমানও হয় আল্লাহ তা-ও উপস্থাপিত করবেন, সালাত কায়েম করা, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা, বিপদে ধৈর্য ধারণ করা, জমিনে উদ্ধতভাবে চলাফেরা না করা, জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা এবং নিচুস্বরে কথা বলা।

সুবহানাল্লাহ! কত সুন্দরভাবে আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সন্তানদের আদর্শ সন্তানরূপে কোরআনের আলোকে গড়ে তুলতে পারি তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। 

রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার অধীন লোকদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। শাসকও দায়িত্বশীল, তাকেও তার অধীন লোকদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। নারী তার স্বামীর বাড়ি এবং সন্তানসন্ততির তত্ত্বাবধায়ক, তাকেও তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। ’ বুখারি।

কীভাবে আমরা তা করব? উপায় হলো, আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের তা করতে নিষেধ করব, আর যা করতে আদেশ করেছেন তা মেনে চলতে আদেশ করব। তা হলেই তাদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমার পরিবার-পরিজনকে নামাজ পড়ার নির্দেশ দাও এবং তুমি নিজেও তা দৃঢ়তার সঙ্গে পালন করতে থাক। ’ সুরা ত্বা-হা, আয়াত ১৩২।

হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে রহমত করুন যে নিজে রাতে সালাত আদায় করতে দাঁড়িয়েছে এবং তার স্ত্রীকে জাগিয়েছে এবং যদি সে দাঁড়াতে অপারগতা প্রকাশ করে তখন তার মুখে পানি ছিটিয়েছে। ’ আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ।

হাদিসে আরও এসেছে, রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সালাতের জন্য সাত বছর বয়সে পৌঁছালেই নির্দেশ দাও, আর ১০ বছর হলে প্রয়োজনে সালাতের জন্য প্রহার কর। আর তাদের শোয়ার জায়গা পৃথক করে দাও। ’ আবু দাউদ।

আমাদের সবার খেয়াল রাখা উচিত আমাদের সন্তানরা বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা যেন তাদের সালাত, সাউমসহ যাবতীয় ইবাদত করার জন্য কঠোর হই এবং যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট থাকি। রসুল (সা.) যখনই বিতর পড়তেন তখনই আয়শা (রা.)-কে ডাকতেন এবং বলতেন, ‘হে আয়শা! দাঁড়াও এবং বিতর আদায় কর। ’ মুসলিম।

সুরা বাকারায় আল্লাহ বলেন, ‘জাহান্নামের সেই কঠিন আগুনকে ভয় কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। ’ আয়াত ২৪।

জাহান্নামের এ আগুন সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদর এ আগুন জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের ১ ভাগ। সাহাবায়ে কিরাম বললেন ইয়া রসুলুল্লাহ! এ ১ ভাগ দিয়ে শাস্তি দিলেই তো হতো। তখন রসুল (সা.) বললেন, জাহান্নামের আগুন তোমাদের আগুনের তুলনায় ৬৯ গুণ বেশি উত্তপ্ত। ’ বুখারি।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন কিয়ামতের কঠিন দিনে জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের হেফাজত এবং আমাদের সন্তান-সন্ততিদের ইমানদার হিসেবে কোরআনের বিধান মেনে জীবন গড়ার তৌফিক দান করুন।