দুর্নীতির ব্যাপারে পুলিশের অবস্থান জিরো টলারেন্স উল্লেখ করে নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, দেশের প্রতিটি থানাকে জনবান্ধব করতে নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। কারণ, কোনো সমস্যায় পড়লে মানুষ প্রথমে থানায় যায়। তাই থানার ভাবমূর্তির সঙ্গে গোটা পুলিশের ভাবমূর্তি অনেকাংশে নির্ভর করে। তিনি বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা পৌঁছে দিতে ও সেবা প্রাপ্তিকে আরও সহজ করতে কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদস সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
আইজিপি বলেন, কেউ রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হবে না। কোনো পুলিশ সদস্য ব্যবহার হলে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিন। আমি ব্যবস্থা নেব। সামনের জাতীয় নির্বাচনে পুলিশ নিরপেক্ষ ও পেশাদারিত্বসহ কাজ করবে বলে জানিয়ে আইজিপি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনেই প্রতিটি পুলিশস সদস্য কাজ করে। যদি কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে তদন্ত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জনগণের সঙ্গে ভালো ব্যবহার ও দুর্নীতিমুক্ত থাকতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রেও সংবেদনশীল থাকবে পুলিশ। তিনি বলেন, সম্প্রতি ৫০ তরুণের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে পুলিশ। তিনি বলেন, জনগণের সঙ্গে ভালো ব্যবহার ও জনগণের কথা শুনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছি। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে বাংলাদেশ পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ।
র্যাব’র মহাপরিচালকের ‘বাহিনীর সংস্কারের প্রশ্ন নেই’ বিষয়ক মন্তব্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে পুলিশপ্রধান বলেন, সংগঠন একটি জীবন্ত বিষয়, যা প্রতিনিয়ত আধুনিকায়ন ও সংস্কারের মধ্যেই থাকে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, অপরাধীরা অপরাধ করার জন্য যে রকম কৌশল নিয়ে থাকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের চেয়ে আরও বেশি কৌশলী হতে হবে। তাই সংস্কার সব প্রতিষ্ঠানেই হয়। র্যাব-এ সংস্কার চলমান।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ সবসময় আইন অনুযায়ী চলে। তারপরও কারও বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে, আমাকে সুনির্দিষ্টভাবে জানালে ব্যবস্থা নেব।
’ডিএমপিতে বছরের পর বছর দায়িত্ব পালন করছেন একই কর্মকর্তা, তারা ঢাকা শহর ছাড়ছেন না, এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বদলির ক্ষেত্রে কিছু কিছু জিনিস ফলো করি। শুধু পুলিশে না, বিভিন্ন অরগানাইজেশনে একই লোক অনেক দিন ধরে কাজ করেন। কর্মকর্তার দক্ষতা দেখে যদি মনে করে তাকে রাখা দরকার, তাহলে রেখে দেয়। আর যাকে রাখার দরকার নেই, তাকে বদলি করা হয়।
বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশ বাড়াবাড়ি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে আইজিপি বলেন, পুলিশ কর্মসূচিগুলোতে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ট্রেনিং রয়েছে, প্রতি ক্ষেত্রে তা ফলো করা হয়।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জঙ্গিবাদের ট্রেনিং দেওয়া হয়। রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেতে নিরাপদ বোধ করেন না, এ বিষয়ে আইজিপি বলেন, আমরা যখন যেখানে তথ্য পেয়েছি, প্রতিটি তথ্যকে বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ব্যবস্থা নেওয়ার কারণেই জঙ্গি হামলা হচ্ছে না।
পুলিশ বাহিনীতে গোপালগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ-বরিশাল-চাঁদপুর গ্রুপিং দেখা যায়। বিভিন্ন সময় এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে হেয় করার জন্য লেগে থাকে, গ্রুপের প্রপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করে, এমন প্রশ্নের উত্তরে আইজিপি বলেন, আমি পুলিশের গ্রুপিং সম্পর্কে জানি না। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।
সাংবাদিক ও পুলিশ একে অপরের সঙ্গে কাজ করছে। কিন্তু মাঠে কাজ করতে গেলে টার্গেট করে সাংবাদিকদের মারধর করা হয়। এ বিষয়ে পুলিশের পদক্ষেপ জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, এমন অবস্থায় আপনারা আমাদের বলবেন, আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করব।
৯৭ হাজার বিদেশির পাসপোর্ট নেই, অবৈধভাবে বাংলাদেশে রয়েছে। তারা জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে আইজিপি বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাদের তথ্য নেওয়া হয়। যেই দেশের নাগরিক সেই দেশ থেকে তথ্য নেওয়া হয়। আর ক্রাইমের সঙ্গে যদি তারা জড়িত থাকেন তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।