ঘুষ দিলে তিন লাখের গৃহকর ১ লাখ করার প্রস্তাব রাজস্ব কর্মীর-গণশুনানিতে অভিযোগ
-

সাদ্দাম হোসেনঃ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নাগরিক সেবা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হলেও গৃহকর আদায়ে তৎপর রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম নগরবাসী। একই সঙ্গে গৃহকর মাত্রাতিরিক্ত বাড়ানো হয়েছে দাবি করে ওই কর কমাতে ঘুষ দাবি করছেন রাজস্ব বিভাগের কর্মীরা- এমন অভিযোগও তাঁদের।


শুক্রবার নগরীর কদমতলীতে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের গণশুনানিতে ভুক্তভোগীরা এসব অভিযোগ করেন। এ সময় চসিক মেয়র চট্টগ্রামের জন্য বিপজ্জনক ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।

করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নূরুল আবছারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে নগরের আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশন চারতলা ভবনের চারটি ইউনিটের জন্য গৃহকর নির্ধারণ করেছে ৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা। অথচ আগে এই কর ছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। তবে চুক্তি করলে কর ১ লাখ টাকা করার আশ্বাস দিয়েছেন সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের এক কর্মী। ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁর গৃহকর কমানো বিষয়টি ঝুলে আছে বলেও জানান তিনি।

গণশুনানিতে অন্তত ১৫ জন করদাতা গৃহকর নিয়ে অসন্তোষ ও বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেন। তাঁরা বলেন, আগের তুলনায় গৃহকর ৫ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

গণশুনানিতে অতিথির বক্তব্যে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আকতার কবির চৌধুরী বলেন, 'বর্তমান চসিক মেয়রের আশপাশে ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজরা বসে আছেন। মেয়র তাঁদের সুরক্ষা দিচ্ছেন।' ভাড়ার ওপর ধার্য করা গৃহকর বাতিল করে আয়তনের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের দাবি তাঁর।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্ট চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বলেন, 'গৃহকরের নামে সিটি করপোরেশনের লোকজন ভবন মালিকদের হয়রানি করছেন।'

এডভোকেট ভুলন ভৌমিক বলেন, সিটি কর্পোরেশন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ট্যাক্স দেয়ার পরও সুইপারকে আলাদা টাকা দিতে হয়। তিনি বলেন, যে আইনে আপিল করলে ট্যাঙ কমাবে সে আইনে বিনা আপিলে ট্যাক্স কমিয়ে দিন।

চিকিৎসক সুশান্ত বড়ূয়া বলেন, 'গৃহকর বাড়লে শুধু ভবন মালিকরা চাপে পড়বেন না, ভাড়াটিয়ারাও চাপে পড়বেন।'

শহীদুল আলম স্বপন বলেন, আজকের গণশুনানি প্রতীকী। আমরা কোনো কর্তৃপক্ষ নই। তিনি বিদ্যমান ট্যাঙ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়ে বলেন, এতে কারো আপত্তি থাকবে না।

ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ঘুষ দিলে ট্যাঙ কমে। তার মানে মেয়র সাহেব চাইলে ট্যাঙ কমিয়ে রাখতে পারেন। ঘুষ দিলে যদি কমে তাহলে এমনি কমবে না কেন। তিনি ঘুষ বন্ধে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ মেপে গৃহকর ধার্য্যের প্রস্তাব দেন। প্রয়োজনে সেখানে ২ থেকে ১০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে নাম ধরে সবাই যেভাবে সোচ্চার হচ্ছেন সেটা ভালো দিক। পাড়ায় গিয়ে দুর্নীতিবাজদের নাম উচ্চারণ করতে পারলে লজ্জ্বায় হলেও দুর্নীতি ছেড়ে দিবে।

গণশুনানিতে বক্তব্যরা আরো বলেন, ‘গলা কাটা’ গৃহকর বাতিল করা না হলে হরতাল, নগর ভবন ঘেরাও এবং বন্দর অচল করে দেয়ার মতো কর্মসূচি ঘোষণা করবে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। তবে তার আগে প্রস্তাবিত পৌরকর এবং আপিল ঘিরে সংঘটিত ‘অনিয়ম ও দুর্নীতি’র চিত্র তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দেবে সংগঠনটি। আগামী ৩০ অক্টোবর স্মারকলিপি আকারে এ অভিযোগ দেয়া হবে। এতে সিটি কর্পোরেশনের ‘অনিয়ম’ খতিয়ে দেখার আহ্বান জানানো হবে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে ২৫ অক্টোবর থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত টানা এক মাস ৪১ ওয়ার্ডে গণ মতবিনিময় সভা, ১৩ নভেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে এবং সুবিধাজনক সময়ে মহানগরের আওতাধীন সংসদীয় আসনের সদস্যদের (এমপি) স্মারকলিপি দেয়া হবে। এতে করবিধি-১৯৮৬ বাতিলের দাবি জানানো হবে। ১৮ নভেম্বর কদমতলীতে আয়োজন করা হবে নাগরিক সংলাপ।

গণশুনানিতে সঞ্চালনা করেন করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আমির উদ্দিন ও সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস।