অনলাইন ডেস্কঃ
প্রতিদিনই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের রেকর্ড ভাঙছে। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপে হিমশিম অবস্থা। শয্যার তুলনায় কয়েক গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে। মেঝেতে রেখে চলছে চিকিৎসা।
হাসপাতালে দেরিতে আসায় সংকটাপন্ন অবস্থা তৈরি হচ্ছে রোগীর। চাপ সামলাতে মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কভিড-১৯ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছে।
আইসিইউ রয়েছে ১৭টি। ৩০০-এর মতো শয্যা দু-এক দিনের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যাবে। রোগী বাড়লে প্রয়োজনে আরও শয্যা বাড়ানো যাবে। আশাকরি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডেঙ্গু রোগী কমবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল ডেঙ্গুজ্বরে হাসপাতালে এ বছরের রেকর্ড ১ হাজার ৩৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছে, মারা গেছেন একজন। এ বছর দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ হাজার ৬৩ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১১৩ জন।
চলতি মাসেই মারা গেছেন ৫৮ জন। গতকাল রাজধানীর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৮৯ জন, ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৪৫ জন।
বর্তমানে ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৪৯২ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১ হাজার ২০৬ জন। তবে অন্য হাসপাতাল কিংবা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়া অসংখ্য রোগী থেকে যাচ্ছেন হিসাবের বাইরে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ২১১ জন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ১৬৯ জন, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ৭২ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ১২৫ জন, বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ১৬ জন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ৬৮ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫৫ জন, বিজিবি হাসপাতালে ২৫ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৩৫ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১১৯ জন, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৪৮ জনসহ আরও বেশ কিছু সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছেন। ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছেন ১ হাজার ৭৮ জন। সরেজমিন রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, প্রতি ঘণ্টায় মিটফোর্ড হাসপাতালে নতুন রোগী আসছেন ৪-৫ জন। ওয়ার্ডে সিট না থাকায় মেঝেতে রেখেই সেবা দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য হাসপাতালটিতে ৮০টি শয্যা নির্ধারিত থাকলেও ভর্তি তার দ্বিগুণ। আজিমপুর এলাকা থেকে তিন বছরের শিশু সাদাফ ইসলামকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন মা সাইদা বেগম। শয্যা না পাওয়ায় শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় চিকিৎসা চলছে সাদাফের।
সাইদা বেগম বলেন, ‘ছেলের জ্বর এলে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে টেস্ট করে চিকিৎসকরা জানান ছেলে ডেঙ্গু পজিটিভ। বমি করতে করতে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে সাদাফ। তাই শয্যা না থাকায় মেঝেতেই ছেলেকে নিয়ে আছি। অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। স্যালাইন দেওয়ার পর কিছুটা ভালো মনে হচ্ছে। চোখ মেলে তাকাচ্ছে এখন। ’ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা বলেন, হাসপাতালে আসতে দেরি করছেন অনেক রোগী। শুরুতে ডেঙ্গু হয়েছে কি না বুঝতে না পেরে, জ্বরের নানা চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। এতে অবস্থা সিরিয়াস হয়ে যায়, এরপর তারা হাসপাতালে আসেন। যে কারণে শারীরিক অবস্থা অনেক খারাপ থাকে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মো. রশীদ-উন-নবী বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় আমাদের হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। যেহেতু রোগী বেশি তাই সবাইকে শয্যা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তবে আমরা কাউকে ফিরিয়ে দিচ্ছি না। চেষ্টা করছি যথাসাধ্য সেবা দিতে। ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের এখানে অনেকেই দেরি করে হাসপাতালে আসছেন। জ্বর এলে ডেঙ্গু টেস্ট করে চিকিৎসকের কাছে দ্রুত যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ’ শুধু মিটফোর্ড নয়, ডেঙ্গু রোগীর চাপ রয়েছে শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে।
গত দুই সপ্তাহে হাসপাতালটিতে রোগীর চাপ বেড়েছে দ্বিগুণ। ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে বলে হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গতকাল হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৭২টি শিশু ভর্তি ছিল। হাসপাতালের চতুর্থ তলার ২৪ শয্যাবিশিষ্ট ১৪ নম্বর ওয়ার্ডটি বুকের দুধ খায় এমন শিশুদের জন্য। এর মধ্যে ১২টি শয্যা ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের জন্য, বাকি ১২টি অন্যান্য সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ডেঙ্গু ডেডিকেটেড শয্যা প্রায় ভর্তি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ হাসপাতালেএ বছর ২ হাজার ৪০৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২ হাজার ২৫২ জন, বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ১৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী। রোগীর চাপ সামলাতে মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কভিড-১৯ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। ঢাকার বাইরে থেকে রেফার্ড হয়ে অনেক রোগী আসছে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে।(সূত্র ঃবিডি প্রতিদিন)