অনলাইন ডেস্কঃ
ইংরেজি হিপোক্রেট শব্দটির সহজ সরল অর্থ মুনাফেক। মুনাফেক আরবি শব্দ। মুনাফেক দ্বিমুখী অর্থাৎ এরা দ্বিমুখী নীতিওয়ালা মানুষ। এরা মানুষের কাছে দুই রকম কথা বলে বেড়ায়।
আল কোরআনে এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘মুনাফেকরা হচ্ছে, তারা যখন ইমানদারদের সঙ্গে মিলিত হয় তখন বলে আমরা ইমান এনেছি, আবার যখন শয়তানদের সঙ্গে মিলিত হয় তখন বলে আমরা অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে আছি। আমরা ইমানদারদের সঙ্গে শুধু ঠাট্টা করি মাত্র। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৪) রসুল (সা.)-এর যুগে মুনাফেকদের দেখে বোঝা যেত না। তাদের সব আচার-আচরণ ছিল মুসলমানের মতো।
তারা মসজিদে যেত, নামাজ পড়ত এবং সব মোমিনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখত। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, যার মধ্যে চারটি স্বভাব বিদ্যমান সে মুনাফেক। সাহাবিরা জানতে চাইলেন তা কী? তিনি বললেন, যে মিথ্যা কথা বলে, ওয়াদা করে ভঙ্গ করে, চুক্তি করে লঙ্ঘন করে, আর যখন ঝগড়া করে তখন অশ্লীল কথা বলে। (বুখারি) মুনাফেকরা মুখে ইসলামের পক্ষে কথা বললেও কখনো সত্যিকার অর্থে ইসলামকে ভালোবাসত না।
তাদের অন্তরে ছিল ইসলামবিদ্বেষ। তারা ছিল সব সময় মিথ্যাবাদী। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘মুনাফেকরা যখন তোমার কাছে আসে তখন তারা বলে হে মুহাম্মদ, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি তুমি অবশ্যই আল্লাহর রসুল। হ্যাঁ আল্লাহও জানেন তুমি নিঃসন্দেহে তাঁর রসুল। কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন মুনাফেকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।
’ (সুরা মুনাফেকুন, আয়াত ১) মুনাফিকের চরিত্রের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো সে মিথ্যাবাদী। সুতরাং মিথ্যা থেকে আমাদের সবাইকে বাঁচতে হবে।
আমরা যারা নিজেদের মুসলমান দাবি করি ও মিথ্যা বলার বদভ্যাস আছে তাদের এটি অবশ্যই পরিহার করতে হবে। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে, মিথ্যাই সব পাপের মূল। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট, সে যা শোনে তা সবার কাছে প্রচার করে বেড়ায়। ’ (মুসলিম) মুনাফেকের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য অঙ্গীকার রক্ষা না করা বা ওয়াদা ভঙ্গ করা। আমাদের সমাজে এ ধরনের লোকের অভাব নেই। বড় নেতা থেকে শুরু করে সমাজের সবচেয়ে নিচু স্তর পর্যন্ত তা বিদ্যমান।
আর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো আমাদের মধ্যে কেউ যখন কাউকে কোনো টাকাপয়সা ধার দিই বা কোনো লেনদেন করি, আমরা পাওনাদারদের পাওনা অর্থ ঠিকমতো পরিশোধ করতে গড়িমসি করি। তাকে হেনস্তা করি। এগুলো মুনাফেকের লক্ষণ। একজন মোমিন মুসলমান কখনো এ ধরনের কাজ করতে পারে না। তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হলো আমানতের খেয়ানত করা। আমি, আপনি প্রতিনিয়ত এ ধরনের কাজের সম্মুুখীন হই। কারও কাছে কোনো সম্পদ, অর্থ, বা সোনা-রুপা অর্থাৎ কোনো মূল্যবান সামগ্রী জমা রাখলে আমানতকারী তা ফিরিয়ে দিতে টালবাহানা করে কিংবা দেয় না। যাকে বলা হয় আমানতের খেয়ানত।