অনলাইন ডেস্ক
হার্টের অসুস্থতার প্রধান লক্ষণ বুকব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ ও বুক ধড়ফড়। কাজেই শ্বাসকষ্ট হলে হার্টের অসুস্থতার কথা সর্বাগ্রে মনে করতে হবে। বিশেষ করে ৫০ ঊর্ধ্বদের বেলায়। এ বয়সের শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের কারণ হার্টের সমস্যা।
মানবদেহের বুক ও পেটকে দেহের মধ্যে একটি অঙ্গও বলা যেতে পারে। এ দুটি অঙ্গকে একটি পর্দা দিয়ে ভাগ করা আছে যার নাম ডায়াফ্রাম। ডায়াফ্রাম একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে, আপনার কোনোরূপ ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও এই ডায়াফ্রাম নিজে নিজেই ওঠানামা করে, যা আপনার অজান্তেই ঘটে থাকে যার মাধ্যমে শ্বাসক্রিয়া পরিচালিত হয়। আবার আপনি ইচ্ছে করেও তাকে বন্ধ রাখা বা প্রয়োজনীয় পরিমাণে ওঠানামা করাতে পারবেন।
যেমন পেটে চাপ প্রয়োগ করা, হাঁচি-কাশি দেওয়া, বমি করা। শ্বাস নেওয়ার সময় পেট ওঠানামা করে। কারণ এ সময় বাতাস ঢোকানোর জন্য ফুসফুসের বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য সব সময় পেটকে ওঠানামার প্রয়োজন হয়।
তবে যাদের পেট খুব বেশি নড়াচড়া করার ক্ষমতা হারায়, বিশেষ করে মেদভুড়ি, পেটে পানি জমা হওয়া, পেটে বাচ্চা থাকা অবস্থায় তাদের পরিশ্রম বা কাজ করতে গেলে শ্বাসকষ্ট হয়। বুকের মধ্যে দুটি প্রধান অঙ্গ থাকে ফুসফুস ও হার্ট এবং হার্টের সঙ্গে সংযুক্ত বড় কয়েকটা রক্তনালি হার্ট চলার জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু ফুসফুসের চলার জন্য অনেক বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়, তবে ফুসফুসে বাইরে থেকে দুই ধরনের বস্তু প্রবেশ করে থাকে যেমন বাতাস (অক্সিজেন দেওয়ার জন্য) এবং রক্ত (অক্সিজেন গ্রহণ করার জন্য)। ফুসফুসে এই দুই ধরনের বস্তু (বাতাস ও রক্ত) প্রবেশ করে। এ দুই ধরনের বস্তুর মধ্যে অনেক সময় জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা হতে দেখা যায়।
হার্টে যদিও চারটি প্রকোষ্ঠ আছে; কিন্তু মোট মাংসপেশির ৮০ ভাগ লেফট ভেন্টিকেলে যার মাধ্যমে পাম্প হয়ে সারা শরীরে রক্ত প্রবাহিত হয়। তাই কোনো কারণে হার্ট (লেফট ভেন্টিকল) রক্ত পরিমাণমতো পাম্প করতে না পারার ফলে ফুসফুসের রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে বাতাস গ্রহণে জায়গা কমে যায়, এতে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। কারণ ফুসফুস বেশি বাতাস প্রবেশ করাতে পারছে না, শরীরে পরিমাণ মতো অক্সিজেন ও রসদের অভাবে শারীরিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়ে অনেক সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, এই অবস্থাকে (এলভিএফ) লেফট ভ্যান্ট্রিকুলার ফেইলুর বা (এইচএফ) হার্ট ফেইলুর বলা হয়। প্রাথমিক অবস্থায় হার্ট ফেইলুর হলে ডায়াফ্রাম ও বুকের চারপাশের মাংসসমূহ অধিক কাজ করে অক্সিজেন ও রসদ সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করে শরীরকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। তবে সমস্যার আরও অবনতি হলে কম পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। হার্ট ফেইলুর অনেক দিন স্থায়ী হলে পেটে পানি জমা, বুকে পানি জমা ও হাত-পা-মুখসহ সর্বশরীরে পানি জমা হতে পারে এতে শ্বাসকষ্ট খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। অনেকে এ অবস্থাকে কিডনির সমস্যা মনে করে কিডনি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন। আগেই বলেছি, শতকরা ৮০ ভাগ কারণ হার্টের অসুস্থতার জন্য বাকি কারণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ কিডনি ফেইলুর। এদিকে নজর রাখার জন্য বছরে অন্তত একবার হলেও রক্তের ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করা উচিত। প্রয়োজনে কিডনি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করার প্রয়োজন হবে। হার্ট ফেইলুরের জটিল অবস্থায় শ্বাসকষ্ট অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ব্যক্তি বেশি পরিমাণে পরিশ্রম করলে, মানে ভারী কাজ করলে সাময়িকভাবে একই ধরনের হার্ট ফেইলুরের লক্ষণ হিসাবে শ্বাসকষ্ট হয় এবং বিশ্রাম গ্রহণ করলে ফুসফুসে রক্ত প্রবেশের পরিমাণ কম হতে থাকে কারণ পরিশ্রমকালীন সময়ে মাংসপেশি নড়াচড়া করার ফলে সর্বশরীর থেকে বেশি পরিমাণে রক্ত হার্ট (রাইট এন্ট্রিয়াল ও রাইট ভেন্টিকোলার) হয়ে ফুসফুসের দিকে প্রবাহিত হয়। ফলে ফুসফুসে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং বিশ্রামে ধীরে ধীরে অল্প সময়ের মধ্যে ফুসফুসে রক্ত প্রবেশের পরিমাণ কমতে থাকার ফলে বাতাস প্রবেশের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তাতে ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট দূরীভূত হয়ে যায়, তবে আবারও ভারী কাজ করলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেবে এটাই স্বাভাবিক। দ্রুত নিরাময় হয় বলে এটাকে গ্যাসের সমস্যা অথবা খাওয়া-দাওয়ার তারতম্য বা বদহজম ব্যাখ্যা স্থির করে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা গ্রহণ না করে সুস্থ থাকার চেষ্টা করে। এরকম করার কারণও আছে বটে, যেহেতু সমস্যাটি স্থায়ী নয়, আবার অল্প সময়ে ঠিক হয়ে যায়।
ডা. এম শমশের আলী, চিফ কনসালটেন্ট শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।