হাশরের ময়দানে বান্দার অবস্থা
-

ইসলামের পথনির্দেশঃ

হাশর আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো সমাবেশ, জড়ো হওয়া, একত্রিত হওয়া, ভিড় করা। অর্থাৎ যে মাঠে বা ময়দানে জনসমাবেশ হবে। কেয়ামত এর প্রলয় শেষ হওয়ার পরে মানুষ, জিন এবং সব প্রাণি ও কবর থেকে উত্থিত হয়ে যারা আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে এবং যেই সমাবেশস্থলে একত্রিত হবে সেটাই হাশরের ময়দান।

আল্লাহ বলেন, ‘আজ যা কিছু এর ওপর আছে একদিন তাকে আমি উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব। ’ (সুরা আল কাহাফ-১৮)। সুতরাং হাশরের ময়দান কি রকম হবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের কাছে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব হলো মানুষ জাতি।

তাই মানুষের জীবন বিধানের জন্য তিনি দিয়েছেন কোরআন। যেখানে তাঁর হুকুম, উপদেশ এবং নিষেধ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। দুনিয়া হলো আমাদের জন্য পরীক্ষাগার। এই পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হবে হাশরের ময়দানে।

আল্লাহ হাশরের ময়দানে বান্দার ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করবেন এবং মন্দ কাজের জন্য দেবেন কঠিন শাস্তি। দুনিয়াতে বান্দা কোরআন ও হাদিসের আলোকে জীবন পরিচালিত করলে পুরস্কার হিসেবে লাভ করবে জান্নাত আর না করলে শাস্তি হিসেবে জাহান্নাম। সেই কঠিন দিনে বান্দার আমলের সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার করা হবে। আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং যে ব্যক্তি এক অণু পরিমাণ ভালো কাজ করবে সেদিন সে তা দেখতে পাবে, আর যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করবে সে তাও দেখতে পাবে’ (সুরা জিলজাল ৭-৮)। হাশরের ময়দান কোথায় হবে? আবুযর গিফারী (রা.) হতে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘শাম হলো একত্র ও পুনরুত্থিত হওয়ার স্থান।

 (সহিহুল জামে, হা/৩৭২৬)। শাম বর্তমানে সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের পুরো ভূখণ্ড এবং ইরাক, তুরস্ক, মিসর ও সৌদি আরবের কিছু অংশকে শামিল করে। (সূত্র : উইকিপিডিয়া)। আল্লাহ বলেন, ‘যেদিন এ পৃথিবী ভিন্ন পৃথিবী দ্বারা পরিবর্তিত হয়ে যাবে’ (সুরা ইবরাহিম-৪৮)।

এরপর তিনি তাকে মসৃণ ও সমতল ভূমিতে পরিণত করে দেবেন, তুমি এতে কোনো রকম অসমতল ও উঁচু-নিচু দেখবে না। ’ (সুরা ত্বা হা ১০৬-১০৭)।

যা আমাদের সবার চিন্তার বাইরে। হাশরের মাঠের চিত্র হবে ভয়াবহ। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘মহানবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, সেদিন মানুষকে উলঙ্গ অবস্থায় ও খতনাবিহীন অবস্থায় কবর থেকে হাশরের ময়দানে জমায়েত করা হবে। এ কথা শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসুল, নারী পুরুষ সবাই কি উলঙ্গ অবস্থায় থাকবে? তারা কি একে অপরের দিকে তাকাবে? এরূপ হলে তো তা বড়ই লজ্জার বিষয়। উত্তরে তিনি বললেন, সেদিনটি এত কঠিন ও ভয়াবহ হবে যে, মানুষের মনে একে অপরের দিকে তাকানোর খেয়াল হবে না। ’ (বুখারি ও মুসলিম)।

কাফেররা সেদিন অন্ধ ও চেহারার ওপর ভর করে হাশরের ময়দানে উপস্থিত হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হবে তার জন্য বাঁচার সামগ্রী সঙ্কুচিত হয়ে যাবে। সর্বোপরি তাকে আমি কেয়ামতের দিন অন্ধ বানিয়ে হাজির করব। ’ (সুরা ত্বা হা-১২৪)।

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন মানুষ রোদের তাপে গরমে জমিনের ওপর সত্তর হাত ঘামে ডুবে যাবে। তাদের ঘামে তারা কান পর্যন্ত ডুবে থাকবে (বুখারি ও মুসলিম)। কিয়ামত দিবসে সূর্য মানুষের খুব নিকটবর্তী হবে, এমনকি দূরত্ব এক মাইলেরও কম হবে। পৃথিবী থেকে এত দূরে অবস্থানের পরও আমরা গরমে হাঁসফাঁস করি। ঘেমে যাই। তাহলে হাশরের ময়দানে সেদিন সূর্য নিকটবর্তী হলে মানুষের কী অবস্থা হবে তা কি আমরা একটু ভেবে দেখেছি?

হাদিসে এসেছে, সেদিন সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। কেউ কারও দিকে তাকানোর সময়ও পাবে না। সাহায্যকারী কেউ হবে না। সবাই ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করতে থাকবে। একমাত্র রসুল (সা.) উম্মতি উম্মতি বলে পেরেশান থাকবেন। হাশরের ময়দানে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সাত শ্রেণির মানুষকে আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। এরা হলো- ১. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ। ২. ওই যুবক, যে নিজের যৌবনকে আল্লাহর ইবাদতে অতিবাহিত করেছে। ৪. ওই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পরস্পরকে ভালোবাসে। ৫. যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে ও দুই চোখ দিয়ে আল্লাহর ভয়ে অশ্রু বিসর্জন করে। ৬. ওই ব্যক্তি যে কোনো সুন্দরী নারীর আহ্বান (কুপ্রবৃত্তির জন্য) আল্লাহর ভয়ে প্রত্যাখ্যান করে এবং ৭. যে এমনভাবে দান করে যা তার ডান হাত কি দান করল বাম হাত জানে না (বুখারি ও মুসলিম)। হাশরের ময়দানে ইনসাফের সহিত বিচার করা হবে। সেদিন কারও প্রতি জুলুম করা হবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘আমি কেয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের জন্য মানদণ্ড স্থাপন করব। সুতরাং সেদিন কারও প্রতি জুলুম করা হবে না।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘আমি কেয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের জন্য মানদণ্ড স্থাপন করব। সুতরাং সেদিন কারও প্রতি জুলুম করা হবে না। যদি কোনো আমল সরিষা দানা পরিমাণও হয় আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্য আমিই যথেষ্ট। ’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৪৭)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘আজ প্রত্যেক মানুষকে সে পরিমাণ প্রতিফল দেওয়া হবে যে পরিমাণ সে দুনিয়ায় অর্জন করে এসেছে, আজ কারও প্রতি কোনো রকম অবিচার হবে না। ’ (সুরা মুমিন, আয়াত ১৭)। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে হাশরের ময়দানে ইমানদার হিসেবে কবুল করুন। শাস্তি ও জাহান্নামের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করুন।