অনলাইন ডেস্ক ঃ
সিন্ধু পানি চুক্তি (আইডব্লিউটি) বাস্তবায়ন নিয়ে পাকিস্তানকে নোটিশ পাঠালো ভারত। ফলে এই ইস্যুতে এবার ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে টানাপোড়েন শুরু হলো।
চুক্তি নিয়ে একরোখা আচরণের অভিযোগে পাকিস্তানকে সরাসরি নোটিশ দিলো নরেন্দ্র মোদির সরকার। তাতে বলা হয়েছে, গত ৬২ বছর ধরে এই চুক্তির সব শর্তাবলি মেনে চলেছে ভারত।
কিন্তু পাকিস্তান যে আচরণ করছে তাতে নোটিশ ধরানো ছাড়া উপায় ছিল না।
৯ বছরের দীর্ঘ আলোচনার পর ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের করাচিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি হয়েছিল। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ও পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মো. আইয়ুব খান স্বাক্ষর করেছিলেন সেই চুক্তিতে। পশ্চিমে বয়ে যাওয়া সিন্ধু চেনার ঝিলাবের মতো নদীর পানির অধিকাংশ পাবে।
সাক্ষী হিসেবে বিশ্ব ব্যাংকও ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
সিন্ধু নদ ও সংলগ্ন বিভিন্ন নদনদীর পানির ব্যবহার নিয়ে তাতে পারস্পরিক সহযোগিতা ও তথ্য আদান-প্রদানের সম্মত হয় দুই দেশ। ওই চুক্তিতে বিপাশা, ইরাবতী ও শতদ্রু- আগের এই তিন নদীর ওপর ভারতের নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়। অন্যদিকে সিন্ধু, চন্দ্রভাগা ও ঝিলম- পশ্চিমের এই তিন নদীর ওপর পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়।
তবে চাষের কাজে পশ্চিমের নদীগুলো থেকে সীমিত পরিমাণ পানি ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। আবার পানি খরচ না করে বা নদীর গতিপথ রুদ্ধ না করে দুই দেশেরই বিদ্যুৎ উৎপাদন, মৎস্য চাষ করার ক্ষেত্রেও কোনো অসুবিধা নেই বলেও চুক্তিতে উল্লেখ আছে।
জানা গেছে, গত ২৫ জানুয়ারি সিন্ধু পানি চুক্তির পরিবর্তন করতে পাকিস্তানকে নোটিশ পাঠিয়েছে ভারত। জম্মু-কাশ্মীরে ঝিলম নদীর ওপর কিষেণগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং চন্দ্রভাগা নদীর ওপর রাটলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়েই দুই দেশের মধ্যে ঝামেলা বাধে। প্রযুক্তিগত কারণ দেখিয়ে ওই প্রকল্পে আপত্তি জানায় পাকিস্তান।
তাদের দাবি ছিল ৩৩০ মেগাওয়াটের কিষেণগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং ৮৫০ মেগাওয়াটের রাটলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে নদীর গতিপথ রুদ্ধ হবে। পাশাপাশি পাকিস্তানে পানির যোগানেও ঘাটতি দেখা দেবে বলে দাবি করে পাকিস্তান। যদিও ভারতের দাবি ছিল দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পই ‘রান অব দ্য রিভার’ প্রকল্প অর্থাৎ এক্ষেত্রে নদীর পানি মজুদের কোনো প্রশ্ন নেই।
কিন্তু ভারতের দাবি মানতে নারাজ পাকিস্তান। কারণ, পাকিস্তানের সেচ ব্যবস্থার ৮০ শতাংশই সিন্ধু ও তার উপ-নদনদী গুলোর ওপর নির্ভরশীল। কোনোভাবে তা আটকে গেলে কৃষি কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দেখা দিতে পারে পানি সংকট।
এসব কারণ দেখিয়েই ২০১৫ সালে সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের দাবি তোলে পাকিস্তান। যদিও ২০১৬ সালে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের দাবি থেকে সরে আসে দেশটি। তার পরিবর্তে আইনি পথে অর্থাৎ আদালতের মধ্যস্থতায় এর সমস্যা সমাধানে চেয়ে সরব হয় তারা। যদিও ভারত তাতে রাজি হয়নি।
ভারতের বক্তব্য ছিল পাকিস্তানের এমন একরোখা আচরণ সিন্ধু পানি চুক্তি লঙ্ঘন করছে। কারণ, সিন্ধু পানি চুক্তির নবম ধারায় বিবাদ নিস্পত্তির পদ্ধতির বিষয়টি পরিষ্কার করে উল্লেখ রয়েছে। সেই নিরীখে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞের কাছে ভারত বিষয়টি উত্থাপন করার জন্য আলাদা করে অনুরোধও জানিয়েছে।
ভারতের অভিমত, সমস্যার সমাধান অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু তার জন্য একইসঙ্গে পৃথক পথ অনুসরণ করা ঠিক নয়। এতে অসামঞ্জস্য তৈরি হবে। ২০১৬ সালে এ নিয়ে বিশ্বব্যাংকও ভারতের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলে জানা যায়। কিন্তু তারপরও পাকিস্তান নিজের অবস্থানে অনড় থেকেছে। ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে পাঁচবার বৈঠক হয়।
বিশ্বব্যাংকও জানিয়েছে, এক সমস্যার সমাধান পৃথক উপায়ে হতে পারে না। তাই বিশেষজ্ঞ দিয়ে বিষয়টি পর্যালোচনা ও আইনি প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও পাকিস্তান তাদের নিজেদের অবস্থান পাল্টায়নি। আর তাতেই চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের নোটিশ ধরালো ভারত।
সমস্যার সমাধানের জন্য পাকিস্তানকে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে ওই নোটিশে। এ বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ইসলামাবাদকে ৯০ দিন সময় দিয়েছে ভারত