অনলাইন ডেস্ক
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নে জেলেদের জন্য ‘মানবিক কর্মসূচি’র আওতায় বিশেষ বরাদ্দ চাল থেকে ১০ কেজি কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের (মেম্বার) বিরুদ্ধে।
অভিযোগ উঠেছে, নিবন্ধিত দরিদ্র জেলেদের জন্য বরাদ্দ করা ৪০ কেজি চালের বদলে তাদের দেওয়া হয়েছে ৩০ কেজি করে। আর বরাদ্দের ৭টন চাল হরিলুট-করার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই আহসান হাবিব মিন্টুর (মেম্বার) বিরুদ্ধে। গত বুধবার ( ২২মার্চ) নাজিরপুর ইউনিয়নে জেলেদের মাঝে চাল বিতরণকালে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে জাটকা আহরণে বিরত থাকা দরিদ্র জেলেদের জন্য ‘মানবিক কর্মসূচির’র আওতায় নাজিরপুর ইউনিয়নের ৬৮৩ জন নিবন্ধনকৃত জেলেদের মাঝে ৪০ কেজি হারে ২৭.৩২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। গত বুধবার নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে ধানদী কামিল মাদ্রাসা মাঠে ওই চাল বিতরণ করছিলেন ইউপি সদস্যরা।
এসময় সরেজমিন দেখা গেছে, জেলেদের মাঝে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে। পাশেই বসে আছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার ও ইউপি সচিব।
সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়ঝাপ শুরু করেন ইউপি সচিব আবু বকর। চাল নিয়ে ফেরার পথে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে মো. রেজাউল করিম (৪৩) বলেন, আগে ৪০ কেজি করে চাল পেতাম। এবার দিয়েছে ৩০ কেজি। তবে বস্তা দেখে মনে হয় ৩০ কেজিরও কম। পরিষদের পাশে এক দোকানে মাপ দিয়ে দেখা যায় ওই বস্তায় চাল রয়েছে ২৩ কেজি ৯০০ গ্রাম। ৬নং ওয়ার্ডের জেলে আ. রহমান, মো. শাজাহান সরদার ও ফারুক মৃধা চাল নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। তাদের সাথে কথা হলে তারাও জানান, আগে ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হত, এবার ৩০ কেজি করে দেয়া হয়েছে। ৮নং ওয়ার্ডের জেলে মো. জাকির হোসেন ও ২ নং ওয়ার্ডের জেলে মো. ফিরোজ জানান, তাদেরকেও ৩০কেজি করে চাল দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম মহসিনরে অনুপস্থিতিতে চেয়ারম্যানের ভাই ইউপি সদস্য আহসান হাবিব মিন্টুর একক সিদ্ধান্তে জেলেদের মাঝে ৪০ কেজি চালের পরিবর্তে ৩০ কেজি করে চাল বিরতণ করা হয়।
৬৮৩ জন নিবন্ধিত জেলেকে ১০ কেজি করে চাল কম দিলে হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৭ মেট্রিক টন চাল মিন্টু আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য আড়াই লাখ টাকার বেশি।
জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে আহসান হাবিব মিন্টু সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করে বলেন, এবারের জন্য মাফ করেন। সংবাদ প্রকাশ করার দরকার নেই।
এ বিষয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য মো. আলম হোসেন চাল কম দেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ৬৮৩ জনের নামে চাল বরাদ্দ পাইছি। জেলে সংখ্যা ৭৫৩ জন। তাই সকল জেলেদের মধ্যে ৩০ কেজি করে চাল দিয়ে সমন্বয় করা হয়েছে। ৭৫৩ জন জেলেকের ৩০ কেজি করে চাল দিলেও প্রায় ৫ মেট্রিক টন চাল অবশিষ্ঠ থাকে। যার বাজার মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা। অবশিষ্ট সেই চাল কোথায় জানতে চাইলে প্যানেল চেয়ারম্যান আলম হোসেন কোনো উত্তর দিতে পারেননি ।
নাজিরপুর ইউনিয়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বরাদ্দ কম, তাই বাকি জেলেদের সাথে সমন্বয় করে চাল দিতে হয়েছে। এজন্য চালও কম দেয়া হয়েছে। একই কথা বলেন ইউপি সচিব মো. আবু বকর। উপজেলা সিনিয়র সহকারী মৎস্য অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল আমিন বলেন, নিবন্ধনকৃত প্রতি জেলেদের যেভাবে বরাদ্দ দেয়া সেভাবেই চাল বিরতণ করতে হবে। কম দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।