রোজার জরুরি কয়েকটি মাসয়ালা জেনে নিন
-

অনলাইন ডেস্কঃ

সুরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি মাহে রমজান পাবে সে যেন সিয়াম ব্রত করে। ’ এ আয়াতের আলোকে ইসলামী আইনবিদরা বলেন, প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্ক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের ওপর রোজা ফরজ। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১ম খণ্ড, ১৯৫ পৃষ্ঠা) রোজা রাখতে হলে নিয়ত করতে হয়। নিয়ত করা ফরজ।

আরবি নিয়ত অর্থ সংকল্প বা ইচ্ছা। রোজা রাখতে ইচ্ছুক ব্যক্তি মনে মনে এ সংকল্প করবে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আগামী কালের রোজা রাখছি। নিয়ত মুখে বলা জরুরি নয়। (বাদায়েউস সানায়ে ২য় খণ্ড, ২২৬ পৃষ্ঠা) ফকিহরা বলেন, মাহে রমজানের রোজার নিয়ত রাতেই করা উত্তম।

সুনানে আবু দাউদে উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না তার রোজা পূর্ণাঙ্গ হবে না। ’ (আলবাহরুর রায়েক ২য় খণ্ড, ২৫৯ পৃষ্ঠা) তবে যদি রাতে নিয়ত করা সম্ভব না হয় তাহলে দিনে সূর্য ঢলার প্রায় এক ঘণ্টা আগে নিয়ত করলেও রোজা হয়ে যাবে। (আলমুহাল্লা, ৪র্থ খণ্ড, ২৯৩ পৃষ্ঠা)

সাহরি খাওয়া সুন্নত। পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয়, এক ঢোক পানি পান করলেও সাহরির সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।

ফকিহদের গবেষণা হলো, সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময় সাহরি খাওয়া মুস্তাহাব। তবে এত দেরি করা মাকরুহ যে, সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়। মুজামুল আওসাতে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দ্রুত ইফতার করা এবং দেরি করে সাহরি খাওয়া পূর্ববর্তী সব নবীর সুন্নত। ’ মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাকে বর্ণিত হয়েছে, ‘সাহাবিরা দ্রুত ইফতার করতেন এবং দেরি করে সাহরি খেতে পছন্দ করতেন। ’ সূর্যাস্তের পর দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা সুন্নাত।

বুখারির বর্ণনায় রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যতদিন মানুষ সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করবে ততদিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে। ’ এ ক্ষেত্রে মাগরিব নামাজের আগে ইফতার করা সুন্নাত। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) মাগরিবের নামাজ পড়ার আগে তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনা খেজুর খেতেন। আর তা-ও না পেলে এক ঢোক পানি খেয়ে ইফতার করতেন। ’ (সুনানে তিরমিজি)

শরিয়তের দৃষ্টিতে রোজা রেখে ইচ্ছাকৃত পানাহার কিংবা যৌনাচার করলে রোজা ভেঙে যায়। ভুলবশত খেলে বা সহবাস করলে রোজা ভাঙবে না। তবে স্মরণ হওয়া মাত্র এ থেকে বিরত না হলে রোজা ভেঙে যাবে। পরে কাজা আদায় করতে হবে। একটি দীর্ঘ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘এক ব্যক্তি নবীজিকে (সা.) বলল, আমি রোজা অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়েছি। রসুল (সা.) তাকে বললেন, তুমি কাজা ও কাফফারা দুটোই আদায় করবে। ’ (বুখারি) আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যক্তি রোজা রেখে ইচ্ছাকৃত পানাহার করল। রসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি কাফফারাস্বরূপ একটি গোলাম আজাদ করবে অথবা দুই মাস টানা রোজা রাখবে। এ দুটো যদি সম্ভব না হয় তাহলে অবশ্যই ষাটজন মিসকিনকে পেট ভরে খাওয়াবে। ’ (সুনানে দারাকুতনি)

তবে রোজা অবস্থায় হায়েজ বা নেফাস শুরু হলে রোজা ভেঙে যাবে। পরে তা কাজা করতে হবে, কাফফারার প্রয়োজন নেই। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আজহার দিন নারীদের লক্ষ করে বললেন, ‘হে নারীসমাজ! তোমরা ঋতুস্রাবের সময় রোজা রাখতে পারো না এবং নামাজও পড়তে পারো না। এটা তোমাদে ধর্মের অপূর্ণতা। ’ (বুখারি)

অজু বা গোসলের সময় রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভিতর পানি চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে। তাই রোজা অবস্থায় অজু-গোসলের সময় নাকের নরম স্থানে পানি পৌঁছানো এবং গড়গড়াসহ কুলি করার প্রয়োজন নেই। সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, ‘রোজা অবস্থায় কুলি করতে গিয়ে অনিচ্ছায় গলার ভিতর পানি চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে এবং তা কাজা করতে হবে। ’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক) হানাফি ইমামদের মতে, দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে যদি তা থুতুর সঙ্গে ভিতরে চলে যায় তবে রক্তের পরিমাণ থুতুর সমান বা বেশি হলে রোজা ভেঙে যাবে। (আলবাহরুর রায়েক ২য় খণ্ড, ২৭৩ পৃষ্ঠা) হানাফি আলেমরা আরও বলেন, মুখে বমি চলে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে। যদিও তা পরিমাণে অল্প হয়।