সারা বিশ্ব বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশের দিকে,বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, এটাই আমার চাওয়া, আমি নিজের কোনো নাম, ধন-সম্পদ চাই না: প্রধানমন্ত্রী
স দ

নিজস্ব প্রতিবেদক । ।
নিজের নামে পদ্মাসেতুর নামকরণের প্রস্তাব
প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,
আমি কোন নাম চাই না, ধন-সম্পদ কিছু না।
জীবনে আমার কোন চাওয়া-পাওয়া নাই।
চাওয়া একটাই, দেশকে এমনভাবে গড়ে তুলবো, যেন সারা বিশ্বে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে
বাংলাদেশের দিকে, এটাই আমার চাওয়া
বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রামে
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ এর
বোরিং কার্যক্রম এবং শহরের লালখান
বাজার হতে শাহ্ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজের
উদ্বোধন শেষে এক সুধি সমাবেশে তিনি
একথা বলেন। পতেঙ্গার রিং রোডে এ
সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুটি প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ও সুধী সমাবেশে যোগ দিতে সকাল পৌনে ১১টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। দুটি প্রকল্পের উদ্বোধনের পর মোনাজাত ও দোয়ায় অংশ নেন তিনি।
বিজ্ঞাপন পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্রের কথা এবং
পদ্মাসেতুর নামকরণ ‘শেখ হাসিনা সেতু’ নামে
না করার বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী
বলেন, ‘এটা নিয়ে কত ঝগড়া করতে হয়েছে আর কত যে মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে, সেটা আপনারা বুঝবেন না। যাই হোক আল্লাহর রহমত, আমি মনে করে এটা অবশ্যই আল্লাহর একটা রহমত আছে। যে কারণে আমরা নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করতে পেরেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। পদ্মাসেতু নিয়ে যখন এতকিছু হয়ে গেছে, এটা ওই পদ্মাসেতু নামেই থাকবে। এটার সঙ্গে আর কোনো নাম যুক্ত হওয়ার প্রয়োজন নাই। কাজেই আমি আমার মন্ত্রীকে বলব ‘এখানে রাগ ক্ষোভ করার কিছু নেই। আমি কোনো নামও চাই না, আমি কিছুই চাই না। জীবনে কোনো কিছু আমার চাওয়া পাওয়া নাই। কারণ আমি তো সব হারিয়ে নিঃস্ব রিক্ত হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে এসেছি। নইলে আমার মতো একদিনে যারা আপনজন হারায়, তাদের পক্ষে এত কাজ করা সম্ভব না। এটা আমি করি একটা
আদর্শের জন্য। আমার বাবা এদেশের জন্য
সারাটা জীবন কষ্ট করেছেন। আমার মা কষ্ট
করেছেন। এই দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে
গেছেন তিনি এবং এই দেশের গরিব-দুঃখী
মানুষ তাদের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। আমি যদি এতটুকু কাজ করি গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য করতে আমার জীবনের সেটাই সব থেকে বড় সার্থকতা। এর বাইরে আর কোনো চাওয়ার কিছু নেই। আমরা আর কোনদিকে তাকাই না। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করি,ওইটুকু চিন্তা করে, আমার দেশের একটা গরিব মানুষও যেন গৃহহারা না থাকে। এদেশের কোনো মানুষ গৃহহারা থাকবে না। প্রতিটি মানুষ শিক্ষা পাবে, চিকিৎসা সেবা
তার দোরগোড়ায় পৌঁছাব, প্রতিটি মানুষ
সুন্দরভাবে বাঁচবে। যেটা আমার বাবার স্বপ্ন
ছিল। তিনি বারবার যেটা চাইতেন। এ
বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখে
তার মন কাঁদত। কাজেই সেই কাজটুকু যতটুকু
করতে পারি, সেটাই হচ্ছে সার্থকতা।’
‘সেই সঙ্গে, আমরা রক্ত দিয়ে দেশের
স্বাধীনতা এনেছি। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে
বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি।
আর বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বে
মাথা উঁচু করে চলতে চাই। সম্মানের সঙ্গে
আমার দেশের মানুষ চলবে। সেটাই আমি চাই।’ ‘একসময় ১৯৭৫’র পর যখন বাইরে ছিলাম, শুনতে হতো, বাংলাদেশ মানে দুর্ভিক্ষের দেশ। বাংলাদেশ মানে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের দেশ, প্রাকৃতিক-দুর্যোগের দেশ। বাংলাদেশ হলেই একটা নেগেটিভ কথা। জিনিসটা খুব কষ্ট লাগত, এটা হতে পারে না। কাজেই সেই দেশকে এমনভাবে গড়ে তুলব, যেন সারা বিশ্ব বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশের দিকে, এটাই আমার চাওয়া আর কিছু না। এ জন্য নামও চাই না, কোনো ধন সম্পদও চাই না। কিচ্ছু চাই না। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, এটাই আমার চাওয়া। সে কারণে সবসময় চেষ্টা করি, নতুন নতুন কিছু করা। যেন গোটা বাংলাদেশের মানুষের জীবনে স্বচ্ছলতা আসে, সেই সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বে যেন আমার দেশের মানুষ সম্মানের সঙ্গে চলতে পারে।’ বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় পাশে
থাকার জন্য বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর প্রতি
ধন্যবাদ শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা সকলেই
সহযোগিতা করছে, সকলেই এগিয়ে আসছে। যার কারণে আজকে আমরা বাংলাদেশকে
উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। এই
বাংলাদেশ জাতির পিতা স্বাধীন করে করে
গেছেন। আমাদের এই স্বাধীনতা কখন ব্যর্থ
হতে পারে না। মাঝখানে আমাদের ২১টি বছর
হারিয়ে গেছে। অসম্মানের একটা চরম
অবস্থায় বাংলাদেশ চলে গিয়েছিল। আমরা
সেই জায়গা থেকে ফিরে এনে আবার
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তুলছি।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আবার নতুন প্রজন্ম
জানতে পারছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে,
ইনশাল্লাহ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা ৭
মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে
রাখতে পারবা না। তাই বাংলাদেশের
মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি,
পারবেও না।’ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনে সুযোগ দিতে দেশবাসীর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পেরেছি বলেই আজকে টানেলের বোরিং খনন কাজ উদ্বোধন করলাম। ইনশাল্লাহ এ টানেলের মাধ্যমে আমাদের চট্টগ্রামের গোটা অঞ্চলটাই আরও উন্নত হবে, সমৃদ্ধশালী হবে। আর পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়ে গেলে দক্ষিণাঞ্চল আরও উন্নত হবে, সমৃদ্ধশালী হবে। ওই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। আমাদের জিডিপিতে আরও অনেক নম্বর যোগ হবে। ৭ দশমিক ৮৬ আমাদের জিডিপি ইনশাল্লাহ এটাকে আমরা ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাব।’
২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী
২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী
উদযাপনেসহ মুজিব বর্ষ উদযাপনের জন্য
চট্টগ্রামবাসীকে পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি
নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
২০৪১ সালে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত
সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে উঠবে। আর
বাংলাদেশকে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য
ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়নের পাশাপাশি
বাস্তবায়ন শুরু করেছি। যেন এই বাংলাদেশ
যেন আরও উন্নত সমৃদ্ধশালী হয়ে গড়ে ওঠে
বলেও আশাবাদ করেন শেখ হাসিনা।
পাশাপাশি ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ।
তখন তো আর বেঁচে থাকব না। কিন্তু আমাদের যে নতুন প্রজন্ম যারা তার বেঁচে থাকবে, তারা হয়ত সেইদিন বাংলাদেশকে একটা উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশ হিসাবে উদযাপন করবে, সেই আশা নিয়েই চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানের মঞ্চে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ তিন বাহিনীর প্রধান এবং চীনা রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়াও সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী
আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্যমন্ত্রী হাছান
মাহমুদ, গৃহায়ন ও গণপুর্তমন্ত্রী স ম রেজাউল
করিম, ভুমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী
জাবেদ, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ
মাহমুদ চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান
চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রামের মেয়র আজম
নাসির উদ্দীন এবং আওয়ামী লীগের
কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, উপ দপ্তর বিপ্লব বড়ুয়া, উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আকতার পপি, পারভীন জামান
কল্পনাসহ চট্টগ্রামের স্থানীয় নেতা ও
এমপিরা উপস্থিত ছিলেন।