অনলাইন ডেস্কঃ
লোকমান (আ.) সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের পরিচিতি পাওয়া যায়, তবে তিনি ছিলেন আল্লাহর অতি প্রিয় একজন বান্দা। আল্লাহ তাঁর সম্পর্কে বলেন, ‘আমি লোকমানকে জ্ঞানদান করেছি, আমি তাকে বলেছি তুমি আল্লাহতায়ালার নেয়ামতের শোকর আদায় কর, কেননা যে ব্যক্তি নেয়ামতের শোকর আদায় করে সে তা করে তার নিজের ভালোর জন্যই। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত ১২)। অনেক গবেষকের মতে, তিনি আদ জাতির ওপর আল্লাহর আজাব নাজিল হওয়ার পর হুদ (আ.) এর সঙ্গে ইমানদারদের যে অংশটি বেঁচে গিয়েছিল লোকমান (আ.) ছিলেন তাঁদেরই বংশোদ্ভূত।
লোকমান কোনো নবী ছিলেন না, তিনি ছিলেন ওলি, প্রজ্ঞাবান ও বিশিষ্ট মনীষী। তিনি তাঁর পুত্রসন্তানকে প্রথমে যে উপদেশ দিয়েছিলেন তা ছিল আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা। লোকমানের প্রথম কথা ছিল কোনো প্রকারের অংশীদারিত্ব স্থির না করে আল্লাহকে গোটা বিশ্বের স্রষ্টা ও প্রভু বলে স্বীকার করা। তাই তিনি তার পুত্রকে বলেছেন, ‘হে আমার প্রিয় বৎস, আল্লাহর সঙ্গে কোনো শিরক কর না, নিশ্চয়ই শিরক বড় জুলুম।
(সুরা লোকমান, আয়াত ১৩)। এরপর লোকমান তাঁর পুত্রকে আল্লাহর প্রতি ও তার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ হয় না, সে আল্লাহর কাছেও কৃতজ্ঞ হতে পারে না। ’ (তিরমিজি ১৯৫৪, আবু দাউদ ৪৮১১)।
পিতা-মাতা যদি আল্লাহর সঙ্গে শিরক করার ব্যাপারে বাধ্য করার চেষ্টা করেন তখন আল্লাহর নির্দেশ হলো তাদের কথা না মানা। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমার পিতা-মাতা আমার সঙ্গে শিরক করার ব্যাপারে পীড়াপীড়ি করে তাহলে তুমি তাদের দুজনের কথা কখনোই মানবে না। তবে তুমি দুনিয়ার জীবনে তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। তুমি শুধু তার কথাই মেনে নেবে যে ব্যক্তি আমার অভিমুখী হয়েছে। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত ১৫)।
এ আয়াতের মাধ্যমে লোকমান তাঁর পুত্রকে শিরকের ব্যাপারে পিতা-মাতার আদেশ অমান্য করার জন্য সন্তানকে উপদেশ দিয়েছেন এবং পাশাপাশি তাদের সঙ্গে সদাচরণেরও নির্দেশ দিয়েছেন। পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে তার সবকিছুই তাঁর জ্ঞানের আওতাধীন। যাবতীয় বস্তু মহান আল্লাহর জ্ঞান ও ক্ষমতার আওতাভুক্ত। ’ লোকমান আরও বললেন, হে বৎস, যদি তোমার কোনো আমল সরিষার দানার পরিমাণ ছোটও হয় এবং তা যদি শিলাখ বা আসমানে লুকিয়ে থাকে অথবা জমিনের ভিতরে তাও আল্লাহতায়ালা সেদিন সামনে এনে হাজির করবেন।
সুরা লোকমান, আয়াত ১৬)। অর্থাৎ তিনি প্রত্যেকের কাজের রেকর্ড সামনে নিয়ে আসবেন। লোকমান আরও বললেন, ‘হে আমার প্রিয় বৎস, তুমি সালাত কায়েম কর, সৎ কাজের আদেশ দাও এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাক। তোমার ওপর কোনো বিপদ মুসিবত এলে তাতে ধৈর্য ধারণ কর। (সুরা লোকমান, আয়াত ১৭)। পঞ্চম উপদেশ সামাজিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে যে লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা কথোপকথনের সময় মুখ ফিরিয়ে রেখ না, যা তাদের প্রতি উপেক্ষা ও অহংকারের নিদর্শন এবং ভদ্রোচিত স্বভাব ও আচরণের পরিপন্থী। অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে গাল ফুলিয়ে বা অবজ্ঞা ভরে কথা বল না এবং জমিনের বুকে কখনো উদ্ধতভাবে বিচরণ কর না। আল্লাহ অহংকারীকে পছন্দ করেন না। এরপর লোকমান তাঁর ছেলেকে বললেন, ‘হে বৎস জমিনে চলার সময় তুমি মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর, তোমার কণ্ঠস্বর নিচু কর, অবশ্যই আওয়াজসমূহের মধ্যে সবচেয়ে অপ্রীতিকর হলো গাধার আওয়াজ। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত, ১৯)।
আমরা যেন লোকমান (আ.) এর ন্যায় আমাদের সন্তানদের এসব উপদেশের আলোকে জীবন গড়তে সাহায্য করি। তাহলে অভিভাবক হিসেবে আমাদের ওপর আল্লাহর দেওয়া অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারব বলে আশা রাখি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমাদের নিজ সন্তানদের কোরআন ও হাদিসের আলোকে এবং লোকমান (আ.) এর উপদেশ মোতাবেক জীবন গড়ার তৌফিক দান করুন।