সাদ্দাম হোসেন
উপমহাদেশের খ্যাতিমান আধ্যাত্মিক সাধক হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়ার (র.) বার্ষিক ওরস উপলক্ষে ভক্তের ঢল নেমেছে। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বটতলী গ্রামে এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আসা হাজার হাজার আশেকের মিলনমেলা।
প্রতিবছর বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ৬ আষাঢ় মহাসমারোহে এ ওরস অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আজ মঙ্গলবার প্রধান দিবস হলেও কয়েকদিন আগে থেকেই দূরদূরান্তের ভক্তরা যে যার মতো এসে জিয়ারত করে গেছেন। দিনব্যাপী ওরসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে খতমে কোরআন, মিলাদ, জিকির, জেয়ারত, কাওয়ালি ও ভক্তিমূলক গানের আসর, বিশেষ মোনাজাত, ফাতেহা ও তবারক বিতরণ। দফায় দফায় মিলাদ, মোনাজাত, রোনাজারি আর ফরিয়াদে মুখর হয়ে উঠেছে মাজার কমপ্লেক্স।
ওরস উপলক্ষে বটতলীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী মোহছেন আউলিয়ার শানে করা গানের অ্যালবাম, সিডি, হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী ও খাবার দোকান বসানো হয়েছে। বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, জিপ, টেম্পো, সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনযোগে আসছেন ভক্তরা। সঙ্গে এনেছেন মানত করা পশু-পাখিসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। মাইক বাজছে শিমুল শীলের ‘কী ধন দিলা আল্লাহ তুমি আনোয়ারা থানাতে/বটতলী গ্রাম রৌশন হইল সেই নূরের আলোতে’সহ নানান ভক্তিমূলক গান। ১৯৯৪ সাল থেকে শিমুল শীলের মোহছেন আউলিয়ার ভক্তিমূলক গান ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
বটতলী মাজার এলাকা ছাড়াও বরুমচড়া, হাজীগাঁও, আইরমঙ্গল, খুরুশকূল, বরৈয়া, চাপাতলী, ঝিওরীসহ আশপাশের আনোয়ারার বিভিন্ন এলাকায় জাঁকজমকভাবে ওরস উপলক্ষে গরু, মহিষ, ছাগল জবেহ করা ফাতেহা দিয়ে তবরুক বিতরণ করা হয়েছে।
মোহছেন আউলিয়ার ওরসে অংশ নিতে আসা লোকজনের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে আনোয়ারা থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সাথে যানবাহন ব্যবস্থাপনায় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন।
কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মির্জা মোহাম্মদ হাছান বলেন, ওরশে আগত ভক্তদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ রয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর যানজট নেই বললেই চলে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা লোকজনের যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা বা ভোগান্তি না হয় সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো আমি নিজে পরিদর্শন করেছি।
উল্লেখ্য, বার আউলিয়ার পুণ্যভূমি খ্যাত চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান জিন্দা আউলিয়া হিসেবে পরিচিত শাহ মোহছেন আউলিয়ার অনেক কারামত লোকমুখে ফেরে এ জনপদে।বারো আউলিয়ার অন্যতম অলি হযরত বাবা বদর আউলিয়া ও বাবা হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহ.) সাগরপথে একসাথে চট্টগ্রামে আগমন করেছিলেন। আধ্যাত্মিক রূহানিয়াতের মধ্যে মামা ভাগিনার এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। রুহানিয়তের সফরে মামা ভাগিনার সফরের কথা বহুকাল ধরে প্রচলিত। সাগর পথে তাদের বহনকারী পাথরটি আজো মাজারে সংরক্ষিত আছে। এই মহান অলির অসংখ্য কারামত আজো এ অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত। প্রচার রয়েছে ৯৮৫ হিজরী মোতাবেক ৯৭১ বাংলা ৬ আষাঢ় ১৫৬৫ সালে হযরত মোহছেন আউলিয়া (র.) ইন্তেকাল করেন।
গত রবিবার দুপুরে মাজার ও ওরশ পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়। মাজার পরিচালনা ও ওরশ উদযাপন কমিটির যুগ্ম মোতাওয়াল্লী এস এম ফজলুল করিমের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মোতাওয়াল্লী এসএম জহিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন, মাজার পরিচালনা কমিটির সদস্যদের মাঝে এসএম আবু তাহের মিয়া, এসএম আয়ুব নূরী বাবুল, এসএম নেজাম উদ্দিন মাসুদ, এসএম জহির উদ্দিন, এসএম নজরুল ইসলাম, এসএম জসিম উদ্দিন, এসএম মনজুরুল ইসলাম, এসএম দিদারুল ইসলাম, এসএম আবুল কাশেম ছোটন, এসএম মনছুর, এসএম মহিউদ্দিন আনিস, এসএম ছালেক, এসএম মোজাম্মেল, এসএম নাজিম উদ্দিন, এসএম কফিল উদ্দিন প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় মাজার পরিচালনা ও ওরশ উদযাপন কমিটির যুগ্ম মোতাওয়াল্লী এস এম ফজলুল করিম ও যুগ্ম মোতাওয়াল্লী এসএম জহিরুল ইসলাম বলেন, ওরশ উপলক্ষে খতমে কোরআন, মিলাদ মাহফিল, দোয়া মাহফিল, ধর্মীয় আলোচনা, আখেরি মোনাজাত ও তাবারুক বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে। গত দুইদিন ধরে ওরশকে ঘিরে ভক্তরা মাজার প্রাঙ্গনে আসতে শুরু করেছে। তাদের থাকা–খাওয়াসহ সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে যথাযথ মর্যাদায় ওরশ উদযাপনে সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়। বিশেষ করে সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমের নিজস্ব অর্থায়নে মাজারের তিনতলা বিশিষ্ট ভবন পুননির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানানো হয়। পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।