বহদ্দারহাটে আব্দুস সবুর নামে এক নৈশপ্রহরীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় চার কিশোরের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে সিআইডির তদন্ত দল। তাদের পরিচয়ও জানা গেছে।
তবে, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আসামি হিসেবে তাদের কারোর নাম নেই। এ হত্যাকাণ্ডের পর চান্দগাঁও থানা পুলিশ ঘুরে গত ২৭ মার্চ মামলাটি সিআইডির হাতে আসে। চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য পেয়েছে সিআইডি। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে কয়েকজন দুর্বৃত্ত জোর করে বহদ্দারহাট হক মার্কেটের ভেতরে ঢুকতে চাইলে নিরাপত্তারক্ষী ষাটোর্ধ্ব আব্দুস সবুর তাদের বাধা দেয়। এ সময় তাকে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। ২৬ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান সবুর। তিনি চান্দগাঁও থানাধীন উত্তর মোহরার আব্দুল মোনাফের ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ছখিনা বেগম বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় মার্কেটের মালিক, কর্মকর্তাসহ আটজনকে আসামি করা হয়। এ ব্যাপারে সিআইডির পরিদর্শক ও মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরীফ বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চার কিশোর জড়িত রয়েছে। সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে মামলার এজাহারে তাদের নাম নেই। তিনি বলেন, খুনিদের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তদন্তের স্বার্থে এখন নাম বলা যাচ্ছে না। সংগৃহীত সিসিটিভির ফুটেজেও চার কিশোরের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। মামলার এজাহারে আসামি হিসেবে যাদের নাম রয়েছে তারা ছুরিকাঘাতের ঘটনায় জড়িত ছিল না বলে তিনি দাবি করেন। এদিকে, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ছুরিকাঘাতের ঘটনাটি রাস্তার পাশে হক মার্কেটের মূল গেটের সামনে ঘটেছে। ঘটনার রাতে মার্কেটের গেটের সামনে গিয়ে চার কিশোরকে তাড়িয়ে দেন সবুর। এদের বয়স আনুমানিক ১৫/১৬ বছর। ঘটনার দিন ভোর রাত ৩টা ৫৮ মিনিটে তাদের তাড়িয়ে দিয়ে মার্কেটে প্রবেশকালে চারজনের মধ্যে একজন এগিয়ে এসে পেছন থেকে সবুরকে ছুরি মারে। এ সময় সবুর ঘুরে দাঁড়িয়ে হাতাহাতির সময় পেটে আবার ছুরিকাঘাত করে ওই কিশোর। পরে ছুরিকাঘাতকারী ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। সবুরও বাঁ হাত দিয়ে পেট চেপে ধরে মার্কেটের
ভেতর চলে আসেন। এ সময় রাস্তায় গাড়ির চলাচল ছিল। পরে ঘটনার বিষয়টি মার্কেটের ভেতর ঘুমিয়ে থাকা আরেক নিরাপত্তা রক্ষীকে জানান। তাদের মধ্যে এ নিয়ে কয়েক মিনিট কথা হয়। তখনো তাকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল। পরে ওই নৈশপ্রহরী পকেট থেকে মোবাইল বের করে ঘটনার বিষয়টি কাউকে জানান। এভাবে ছুরিকাঘাতের পর প্রায় এক ঘণ্টা সবুর মার্কেটের ভেতর পায়চারি করছিলেন বলে জানান সিআইডির কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরীফ। তিনি বলেন, ছুরিকাঘাতের ঘটনাটি ছিল মার্ডারের পর্যায়ের। ওই নৈশপ্রহরীকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি বেঁচে যেতেন। জড়িতরা শীঘ্রই গ্রেপ্তার হচ্ছে বলে জানান তিনি। এদিকে, চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল বশর বলেন, ছুরিকাঘাতের ঘটনায় কোনো প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না। এ ঘটনায় বাদী যাদের নাম বলেছে তাদের নাম মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় একটি সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে কয়েকজন কিশোরকে জড়িত থাকতে দেখা যায়। তাদের পরিচয় জানা যায়নি। ফুটেজটি সিআইডিকে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে, তারাই জড়িতদের চিহ্নিত করে খুঁজে বের করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঘটনায় জড়িত মূল আসামিদের ‘বড় ভাই’ হিসেবে চান্দগাঁও এলাকার এক যুবলীগ নেতা রয়েছেন। এতে কৌশলে মামলার মূল আসামিদের বাদ দিয়ে বিভিন্নজনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনার
পর থানা পুলিশের তদন্তে আস্থা না পেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা মামলাটির তদন্তভার সিআইডিকে হস্তান্তর করেন। পরে সিআইডি তদন্ত চালিয়ে জড়িত চার কিশোরকে চিহ্নিত
করার পাশাপাশি তাদের নাম-ঠিকানা পেয়েছে বলে জানায় তদন্ত সূত্র। এদিকে, ছুরিকাঘাতের ঘটনায় নিহতের স্ত্রীর করা মামলায় রিফাত, টুটুল, সোহেল, আবদুল কাদের, সোহেল ও আবদুল হামিদকে দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া তাদের সহযোগিতা করার জন্য মার্কেটের মালিক খোরশেদ আলম, মার্কেটের কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফি ও মো. ফারুক নামে তিনজনকে আসামি করা হয়। হামলাকারীদের বিভিন্ন অপকর্মে তাদের
যোগসাজস থাকার কথা বলা হয় এজাহারে। তবে মামলা দায়েরের পর তখন কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
সূত্রঃ আজাদী /সোহেল মারমা