চৌধুরী মুহাম্মদ রিপনঃ
চট্টগ্রাম হাটহাজারীতে একদিনের ব্যবধানে ঘাড় ভাঙ্গা অবস্থায় রেহেনা আক্তার সুমি (৩২) নামে ফের এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে হাটহাজারী থানা পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পৌর এলাকার ৯নং ওয়ার্ড উত্তর মোহাম্মদপুর খলিফার ঘোনা আনছুর আলী বাপের বাড়ি থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।
নিহত গৃহবধূ খলিফা ঘোনা আনছুর আলীবাপের বাড়ির শামশুল আলমের একমাত্র পুত্র রাশেদুল ইসলামের স্ত্রী ও পৌর এলাকার চন্দ্রপুর হক সাহেব পাড়ার মৃত অলি আহাম্মদের কন্যা। পুলিশ লাশ উদ্ধারের আগেই নিহতের শ্বশুরের পরিবারের সকল সদস্য ঘর ছেড়ে পালিয়েছে যায় । এর একদিন আগে গত বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে দশটায় উপজেলার গুমানমর্দন ইউনিয়ন থেকে মনি নামক দুই সন্তানের জননী অপর এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের পরিবারের সাথে কথা বলে জানতে পারে, ২০০৬ সালে সামাজিকভাবে মোহাম্মদ শামশুল আলমের একমাত্র পুত্র রাশেদের সাথে সুমির বিয়ে হয়। শুরু থেকে শ্বশুর শামশুল আলম ও স্বামী রাশেদ তার উপর নির্যাতন করে আসছিল বলে নিহতের পরিবারের অভিযোগ। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার স্থানীয়ভাবে সালিশি বৈঠক হয়। আমাদের প্রতিনিধি সরেজমিনে জানতে পারে
রাসেদের সাথে তার আপন মামাাতো বোনেরমপরকীয়া সম্পপর্ক চলছিলো দীর্ঘদিন। বছর দুয়েক আগে সুমিকে নির্যাতন করবেনা মর্মে শ্বশুর ও স্বামী সালিশি বৈঠকে স্ট্যাম্পও দেয়। স্বামী রাশেদ বছর বছর দুয়েক আগে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে যান। ৬মাস পূর্বেমদেশে ফেরত এসে পুনরায় বিভিন্ন সময় তার উপর নির্যাতন চালাত। রাসেদ আবার বিদেশে যাবার জন্য সুমিকে দিয়ে স্বামী রাসেদ
আবার ও টাকার জন্য জোরাজরি করে আসছিল। নিহত সুমি সংসার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে শ্বশুরপক্ষের নির্যাতন সহ্য করে স্বামী, একমাত্র কন্যা সন্তান রুমি ও পুত্র সন্তান নাইমকে নিয়ে শ্বশুরের ঘরে বসবাস করে আসছিল। এমতাবস্থায় গত বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে দুই সন্তান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করার সময় স্বামী রাসেদ এক পর্যায়ে সুমিকে মেঝেতে ঘাড় ভাঙ্গা অবস্থায় তার নিথর দেহ ঘরের পড়ে থাকে। সংবাদ পেয়ে হাটহাজারী মডেল থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শন জসিম ঘটনাস্থলে গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই নিহতের শ্বশুর ও শাশুড়ি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এসআই জসিম বলেন, আমরা ঘরের মেঝেতে গৃহবধূ সুমির লাশ পড়ে থাকতে দেখি। তার ঘাড়ে জখম চিহ্ন ও ঘাড় ভাঙ্গা ছিল। এসময় ঘরের মধ্যে কাউকে দেখতে পায়নি। বিষয়টি সন্দেহজনক। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেছি। নিহতের সেজ ভাই মো. মনছুর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য শ্বশুর শামশুল আলম, শাশুড়ি
রাবেয়া ও স্বামী রাশেদ বিভিন্ন সময় আমার বোনের উপর অমানুষিক নির্যাতন করে আসছিল। আজও তারা পরিকল্পিতভাবে আমার বোনকে খুন করে লাশ ঘরে ফেলে পালিয়ে গেছে। আমরা এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ’হাটহাজারী মডেল থানার ওসি মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পূর্বে নিহতের স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি পালিয়ে গেছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।