শপথ নিলেন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার ৪৩টি উপজেলার নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানগণ। গতকাল ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁরা শপথ নেন। বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানগণকে শপথবাক্য পাঠ করান।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বলেন, এই দেশটিকে যদি আপনারা কিছু দিতে চান তাহলে দেশের সম্পদের প্রতি খেয়াল রাখবেন। আপনার কর্ম যদি যথার্থ না হয় তাহলে আগামী ৫ বছর আপনি সঠিকভাবে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। সারা বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়নি চট্টগ্রাম বিভাগে প্রধানমন্ত্রী তা করেছেন। সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী টানেল, কক্সবাজারে ঝিঁনুক স্টাইলে রেল স্টেশন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইন, ঢাকা-চট্টগ্রাম বুলেট ট্রেন বাস্তবায়ন করবেন জনপ্রতিনিধিরাই।
তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আজকের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন- দারিদ্র বিমোচনের জন্য স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থানীয় সরকার অভাবনীয় কাজ করছে। গত ১০ বছরে ৫ লক্ষ শিক্ষার্থীর মাঝে ৩০০ কোটি বিনামূল্যে বই বিতরণ, ৫০ হাজার শিক্ষার্থীকে বিদেশে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, চট্টগ্রাম বিভাগের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক দীপক চক্রবর্তী, জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাহবুবুর রহমান, বান্দরবন পার্বত্য জেলা প্রশাসক, খাগড়াছড়ি জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবুল হাশেমসহ স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ। শুরুতেই পবিত্র কোরান তেলাওয়াত করেন মাওলানা এম হামিদুর রহমান। অনুষ্ঠানে ত্রিপিঠক ও গীতা পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আমাদের মতো সুন্দর সংবিধান বিশ্বে বিরল। সংবিধানের ১৫৩ অনুচ্ছেদে শুধু আমাদের জনগণের কথা বলা আছে। সংবিধানের ১৩৩, ১৩৪, ১৩৫ অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা কিভাবে কাজ করবে,কতক্ষণ কাজ করবে তার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এমনকি উপজেলা পরিষদের একটি গাড়ি কিভাবে ব্যবহার করবে, তারও নীতিমালা আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী ১০টি প্রকল্প নিয়ে তিনি বিগত ১০ বছর যাবত কাজ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে আশ্রায়ণ প্রকল্প, একটি খামার একটি বাড়ি জনগণের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছে।
উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম থাকার কথা উল্লেখ করে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আমরা স্বীকার করছি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। যা পেয়েছেন সঠিক ভোট পেয়েছেন। আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে- মানবিক বাংলাদেশের পাশে আপনারা আছেন কিনা, জনগণের সেবায় আপনার গাড়ির তেল খরচ হচ্ছে কিনা। এ বিশ্বাস আপনাদের ভেতরে জাগতে হবে। আমিও কৃষকের সন্তান, কৃষকের প্রতি সদয় হবেন। ওরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আপনারা সবসময় তিনটি জিনিস লক্ষ্য রাখবেন- বাংলাদেশর সার্বভৌমত্ব, বঙ্গবন্ধু আর প্রকৃতি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আমি একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতির কথা ভাবি, আর একজন বাঙালি হিসেবে বাংলার সাধারণ মানুষের ভালোবাসার কথা ভাবি।’
শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে আপনারা দেশ ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ হলেন। ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক শ্রীলংকায় বোমা হামলায় নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করে বলেন, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। শ্রীলংকা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। জনগণকে নিরাপদ রাখতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে এসে পুলিশকে সঠিক তথ্য দিতে হবে। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক দীপক চক্রবর্তী।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাহবুবুর রহমান।
উল্লেখ্য, মার্চের প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণ শেষে দলীয় প্রতীকে ধাপে ধাপে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর ধারাবাহিকতায় গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়।
এতে পাঁচ জেলার ৪৩ জন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ৪২ জন ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) ও ৪২ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শপথ নেন। এছাড়া আইনি জটিলতায় কাপ্তাই উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও বাঁশখালী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যানের গেজেট প্রকাশ না হওয়ায় তারা শপথ নিতে পারেননি।
শেষে নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বিভাগীয় কমিশনারের সাথে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
শপথ শেষে চেয়ারম্যানকে কাঁধে নিয়ে মিছিল : গতকাল চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার ৪৩জন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের শপথ অনুষ্টান ছিল। বেলা ১টার দিকে সবাই যখন শপথ শেষে বের হয়ে যাচ্ছিলেন তখন সার্কিট হাউজের গেইটে পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে তার কর্মী-সমর্থকরা কাঁধে নিয়ে মিছিল শুরু করে। এসময় তার সমর্থকরা কাতে কাঁধে করে রাস্তা পার হয়ে স্টেডিয়ামের দোকানের দিকে চলে যান। এসময় দৃশ্যটি দেখে উপস্থিত পথচারীসহ সকলের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়।