সীতাকুণ্ডের ৫ জুট মিলের ৭ হাজার শ্রমিক মানবেতরভাবে জীবনযাপন করেছে। বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন এই জুট মিলে টানা তিন মাস জুট মিল শ্রমিকরা বেতন ও মজুরি না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম দুর্দিন পার করছেন।
শ্রমিকদের পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। পাওনা আদায়ে তাঁরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া মেলেনি। কারখানার শ্রমিকরা বেতন ও মজুরি বকেয়া পাওনা আদায়ে দাবীতে ইতিমধ্যে কয়েকদফা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবরোধ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসুচি দিয়েও কোন সাড়া পাচ্ছে না।
শ্রমিকরা জানিয়েছেন তারা পরিবার পরিজন নিয়ে সীমাহীন কষ্ট করছেন। ঠিকমত ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে পাড়ছে না। দীর্ঘদিন যাবত বেতন বকেয়া, পাচ্ছে না মুজুরি কমিশন, চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেও তাদের পাওনা নিতে পাচ্ছেন না। তারা বলেন, দেশের উন্নয়নের চালিকা শক্তি শ্রমিক অথচ তারা তাদের মুজুরী থেকে বঞ্চিত।
এবিষয়ে সিবিএ নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সীতাকুন্ড উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন (বিজেএমসির) নিয়ন্ত্রণাধীন পাঁচটি জুট মিল রয়েছে। হাফিজ জুল মিলের তিন হাজার শ্রমিকের ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা, গুল আহমদ জুট মিলের ১৭০০ শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বকেয়া পড়েছে ৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, এমএম জুট মিলের ৩০০ শ্রমিক-কর্মচারীর ৫ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, গালফ্রা হাবিব লি. এর ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং আর আর টেক্সটাইলের সহস্রাধিক শ্রমিকের পিএফ-গ্র্যাচুইটি বকেয়া পড়েছে।
এসব কারখানার শ্রমিক ও সিবিএ নেতারা জানান, পাটকলগুলোতে হাজার হাজার শ্রমিক দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মিলগুলো তাঁদের শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন ও মজুরি দিচ্ছে না। এভাবে প্রতিটি মিলেই শ্রমিকদের কোটি কোটি টাকা বকেয়া পড়ে থাকায় শ্রমিকরা অসহনীয় জীবন যাপন করছেন।
বারআউলিয়া হাফিজ জুট মিলস লিমিটেডের সিবিএ সাধারন সম্পাদক মো. মাহবুবুল আলম জানান, বর্তমানে হাফিজ জুট মিলের সাড়ে তিন হাজার স্থায়ী-অস্থায়ী শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছয় সপ্তাহের বেতন বকেয়া পড়েছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। এছাড়া ৬-৭ বছর কোনো শ্রমিক পিএফ-গ্র্যাচুইটিও পাচ্ছেন না। বাস্তবায়ন হচ্ছে না মজুরি কমিশনও। ইতোমধ্যে শ্রমিকদের ৮সপ্তাহের বকেয়া বেতন জমে গেছে। কর্মকর্তাদের দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এখানে নিধারুন কষ্টে দিন কাটছে শ্রমিকদের। হাফিজ জুট মিলসকে ঘিরে কলোনী প্রায় ১৩৭টি বিভিন্ন দোকান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মিলে বেতন না দেওয়াতে দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
গুল আহমদ জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তাহের জানান,‘ আমাদের পাঁচ মাসের মজুরি, কর্মকর্তাদের বেতন, অনেক শ্রমিকের পিএফ কোটি কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। বহু দেন দরবার করেও টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে বিভিন্ন মিল আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।
সিবিএ নেতারা বলেন, এখানে সব শ্রমিক প্রতিদিনের বেতনের ওপর নির্ভরশীল। তাঁরা দৈনিক মাত্র ৩০০ টাকা বা এর চেয়েও কম মজুরি পান। মাসের পর মাস এই টাকাও না পাওয়ায় তাঁরা মুদি দোকানের বিল দিতে পারছেন না। তাই দোকানগুলোও আর বকেয়া দিচ্ছে না। এ কারণে হাজার হাজার শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সামনে আসছে ঈদুল ফিতর, এখনও বকেয়া মুজুরী দেওয়ার কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না।
পবিত্র রমজান মাসে শ্রমিকরা টাকার অভাবে ঠিক মতো ইফতারও করতে পারছে না বলে জানান শ্রমিকরা।
মেজবাহ খালেদ / এন ই / সি আই ডি ।।