রমজানের অর্ধেক পার হতে চলেছে। ইতোমধ্যেই জমে উঠেছে বিভিন্ন শপিং মলগুলো। বেচাকেনাও ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। বেশ কয়েক বছর ধরে রেডিমেড অত্যাধুনিক পোশাক-পরিচ্ছদের কারণে ক্রমেই পোশাক কারিগরদের চাহিদা যেন কমে আসছিল। তবে নিত্যনতুন পোশাকের আকাশচুম্বী দামের কারণে গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষের এখনো ভরসা কাপড় কিনে তৈরি করা পোশাকের প্রতি। সে কারণে দর্জি দোকানগুলোতে ভিড় লেগে যায়। ফলে এখন বিরামহীন ব্যস্ততা চলছে দর্জি দোকানগুলোতে।
আগে গ্রামগঞ্জের মানুষ একটু ভালোমানের কাপড়চোপড়ের জন্য শহরে ছুটে যেতেন। এখন শহরের ওপর নির্ভরতা অনেকাংশে কমে এসেছে। মফস্বলের উপজেলাগুলোতে এখন গড়ে উঠেছে একাধিক শপিং মল।
উপজেলার সীতাকুণ্ড, বাডবকুণ্ড , বাঁশবাডীয়া, কুমিরা, বারআওলিয়া, ফৌজদার হাট, ভাটিয়ারীসহ বিভিন্নস্থানে গড়ে উঠেছে এই শপিং মলগুলো। অত্যাধুনিক সাজসজ্জার এসব মলগুলোতেও এখন আর সাধারণ মানুষের ঠাঁই হচ্ছে না। তাদের শেষ আশ্রয় পাড়া-মহল্লা আর হাট-বাজারের দর্জির দোকানগুলো।
উপজেলার বৃহত্তম বাজার সীতাকুণ্ড। বৃহত্তম শপিং মলগুলোর মধ্যে আছে নাহার প্লাজা, সুপার মার্কেট, আফরোজা প্লাজা, সমবায় সমিতি মার্কেট অন্যতম। এসব বাজারে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি দর্জিদের চাহিদাও উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও ভাটিয়ারী, ফৌজদার হাট ও বারআউলিয়া, কুমিরা বাজার, বাঁশবাডীয়া বাডবকুণ্ড মতো স্টেশনগুলোতে ঈদের জমজমাট বেচাকেনা হয়। এদের সাথে পাল্লা দিয়েই টিকে থাকতে হচ্ছে দর্জিগুলোকে। এমন প্রতিকূলতার মধ্যেও তাদের দোকানগুলোতে এখন প্রচণ্ড ব্যস্ততা। কাজের চাপে বিনিদ্র রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের। এতে তারা বাড়তি অর্থ উপার্জনের সুযোগ পেয়ে খুবই খুশি।
এসব দোকান ঘুরে দেখা যায়, এখন তাদের কথা বলার ফুরসৎ নেই। দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। শার্ট, প্যান্ট, সেলোয়ার কামিজ, ফতুয়া, ব্লাউজ, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, কামিজসহ বিভিন্ন ধরনের থান কাপড় থেকে পোশাক সেলাই করছেন। উপজেলার বড় বড় শপিং মলগুলোতে তৈরি পোশাকের যেমন কদর বেশি, তেমনি বাজারভিত্তিক স্টেশনগুলোতে এখনো দর্জি দোকানে চলছে পোশাক তৈরির ধুম।
থান কাপড়ের দোকানগুলোতেও সেলাই মেশিন দিয়ে দর্জি রাখা হয়েছে। থান কাপড় থেকে নিজেরা অর্ডার নিয়ে কাপড় তৈরি করেও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন অনেক দর্জি। কয়েকজন দর্জির সাথে আলাপ করে জানা যায়, এখানে মেয়েদের সেলোয়ার, কামিজ, ব্লাউজ, পেটিকোট, ছেলেদের পাঞ্জাবি, পায়জামা, ছোটদের প্যান্ট-শার্ট তৈরি করা হয়।
ওভারব্রিজ ফকিরহাটের দি ফ্যাশন টেইলার্স এর মালিক দিলীপ কান্তি নাথ বলেন, এ মাসের জন্য সারা বছর অপেক্ষা করেন। তাছাড়া দিন-রাত পরিশ্রম করে এ মাসে বেশি টাকা আয় করেন। তিনি আরো বলেন, আগে মধ্য রোজার সময় তাদের অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেয়া হতো।
এখন ঈদের ৪-৫ দিন আগেও তারা অর্ডার নেবেন। কাজের চাপ বেশি হলেও অতিরিক্ত কারিগর রাখা হয়েছে। এসব দোকানে ছুটছেন মধ্যবিত্ত বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকেরা। ঈদের সময় সবাই চায় সামর্থ্যের মধ্যে নিজের পরিবারের সদস্যদের নতুন কাপড় উপহার দিতে। বিশেষ করে শিশুদের মন জয় করতে তাদের থাকে প্রাণান্তকর চেষ্টা।
সীতাকুণ্ড সাথী টেইলার্সে কাপড় সেলাই করতে আসা সামীমা আক্তার বলেন, যদিও সেলাইয়ের দামটা একটু বেশি। তারপরও ঈদ উপলক্ষে পছন্দের পোশাক দামি না হলেও চলে না। অনেকে জানিয়েছেন ঈদ উপলক্ষে পোশাক সেলাইয়ের দাম অনেকটা বেশি রাখা হচ্ছে।
এ ব্যাপরে টেইলার্স মালিক মনির জানান, ঈদ উপলক্ষে কারিগরদের বেতনের পাশাপাশি বোনাস ও দিতে হয় তাই একটু বেশিই মজুরি নেয়া হচ্ছে। তবে তা অতিরিক্ত নয়।
সীতাকুণ্ডের উজ্জল টেইলার্স এর মালিক উজ্জল দে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার রোজার প্রথম থেকেই অর্ডার শুরু হয়েছে। এ ছাড়া পনের রোজার পর থেকে আরো প্রচুর অর্ডার আসবে। দোকানের সবাই এখন অনেক ব্যস্ত। ছেলেদের পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি তাই নতুন নতুন ডিজাইনের পাঞ্জাবির অর্ডার পাচ্ছি। নাছির বলেন এখন যেহেতু ঈদ মৌসুম তাই কারিগর পাওয়াও খুব মুশকিল। এখন কারিগরের অনেক ডিমান্ড।
সীতাকুণ্ডের আলিফ ট্রেইর্লাসের মালিক বলেন, মেয়েরা নিত্য নতুন ডিজাইনের কাপড় সেলাইয়ের অর্ডার দিচ্ছে। তাদের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা সে রকমই তৈরি করে দিচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা অর্ডার নিচ্ছি। বিশ রোজার পর থেকে আমরা অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেবো।
উপজেলার ফকিরহাটে ফ্যাশন টেইলার্সে বাচ্চাদের জন্য কাপড় বানাতে দিতে আসা অভিভাবক মোহাম্মদ শাহজান বলেন, সময়ের চাহিদায় এখন রেডিমেড পোশাকের মতো সেলাই কাপড়েও নানান বৈচিত্র্য এসেছে। দেশীয় কাপড়ের বুটিক হাউজগুলো স্বল্পমূল্যের ভিতর নকশা করা পাঞ্জাবি, ত্রিপিস, ব্লাউজ, ফ্রকসহ নানা রকম পিস কাপড় সরবরাহ করছে। সেগুলো থেকে সুলভ মূল্যে পছন্দ করা কাপড় বানানো যাচ্ছে। এসব নকশা করা পোশাকের দাম একটু বেশি হলেও আরো কম দামে থান কাপড় দিয়েও পছন্দমতো জামা বানানো যাচ্ছে। তিনি তার ৪ ছেলে-মেয়ের জন্যে পছন্দমতো কাপড় সেলাই করতে দিতে পেরে বেশি খুশী। সেই সাথে তার বাচ্চারাও খুশী ।
মেজবাহ খালেদ / এন ই / সি আই ডি ;