লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা পরিচালনা করছে সীতাকুন্ডের বেশকিছু আবাসিক হোটেল। এগুলোর মধ্যে বেশ কিছু নামিদামি ও অভিজাত হোটেলও রয়েছে। কোনোটি শুরু থেকেই, কোনোটি ৩ থেকে ৫ বছর ধরে লাইসেন্স না নিয়েই ব্যবসা করছে। অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা, বাড়তি দাম নেওয়া, লাইসেন্সবিহীন, লাইসেন্স নবায়ন না করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে এবং সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠিত গণধর্ষণের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন। ইতিমধ্যে উপজেলার পৌর সদর, ভাটিয়ারী ও মাদামবিরিহাটে অবস্থিত ১০টি আবাসিক হোটেলে পুলিশ বিশেষ নজরদারি বাড়িয়েছে। হোটেলগুলোতে আসা লোকজনের এনআইডি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। প্রতিদিন আগত লোকজনের তথ্য হোটেলের নোটিশ বোর্ডে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ।
নজরদারিতে থাকা হোটেলগুলো হলো, সৌদিয়া আবাসিক হোটেল, সন্দ্বীপ আবাসিক হোটেল, জলসা আবাসিক হোটেল, সৈকত আবাসিক হোটেল, নিউ সৌদিয়া আবাসিক হোটেল, গ্রিন ভিউ আবাসিক হোটেল, কম্পোট আবাসিক হোটেল, সাইমুন আবাসিক হোটেল, ভাটিয়ারী আবাসিক হোটেল ও আল আরাফাত আবাসিক হোটেল।
জানা যায়, সীতাকুন্ডের বিভিন্ন পর্যটন স্থানে হঠাৎ দেশের বিভিন্ন এলাকার পর্যটকের উপস্থিতি বাড়তে থাকায় উপজেলার প্রাণকেন্দ্র পৌর সদরসহ বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল গড়ে উঠে। এতে আবাসিক হোটেল ব্যবসার আড়ালে অনৈতিক ব্যবসা খুলে বসেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। একইভাবে ঘণ্টা চুক্তিতে রুম ভাড়া দিয়ে অনৈতিক ব্যবসা চালানো শুরু করেন সীতাকুন্ড পৌর সদরের জলসা আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষ। এ হোটেলকে ঘিরে আনাগোনা বাড়তে থাকে উঠতি বয়সি ছেলেমেয়েদের। পর্যটক সেজে এসে তারা লিপ্ত হতো অনৈতিক কর্মকান্ডে। থানা এলাকার ২০০ গজের মধ্যে হোটেলটির অবস্থান হলেও ছিল না পুলিশের কোনো নিয়ন্ত্রণ। সর্বশেষ গত ১২ অক্টোবর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক নারীকে জলসা আবাসিক হোটেলে নিয়ে টানা দু'দিন পাঁচ বন্ধু মিলে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত পাঁচ ধর্ষকসহ হোটেল ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেন। গ্রেপ্তারকৃতরা আদালতে জবানবন্দি দিয়ে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ছাড়াও বিগত ২০১৮ সালের ১ মে পৌর সদরে অবস্থিত সৌদিয়া আবাসিক হোটেলে বিষাক্ত মদপানে মৃত্যু হয়েছিল উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসেন রবি ও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নাছিরের। ওই মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড দাবি করেন উপজেলা যুবলীগ নেতৃবৃন্দ।
সৌদিয়া আবাসিক হোটেলের মালিক আব্দুর রহমান বলেন, আমরা নিয়মনীতি মেনে হোটেল পরিচালনা করছি। আমাদের হোটেলে কোনো অবৈধ কর্মকান্ড হওয়ার নজির নেই। এ কারণে আমাদের হোটেলে বোর্ডারের সংখ্যা খুবই কম। যারা হোটেল ব্যবসার আড়ালে অনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের বোর্ডারের সংখ্যা বেশি এবং আয়ও বেশি। তিনি আরও বলেন, হোটেলগুলোতে পুলিশের নজরদারি থাকলে অপরাধ অনেকাংশে কমে আসবে।
সীতাকুন্ড থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সুমন বণিক বলেন, হোটেল জলসায় ধর্ষণের ঘটনায় সব আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। তারা আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। ২০১৮ সালে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসেন রবি ও ব্যবসায়ী নাছিরের মৃত্যুর রিপোর্ট এসেছে। অতিরিক্ত মদ পানের কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে। হোটেলগুলোতে বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে। বোর্ডারদের হালনাগাদ তথ্য থানায় জমা দিতে হোটেল মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মেজবাহ খালেদ , এন ই . সি আই ডি