অনলাইন ডেস্কঃ
জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির কথা নিয়মিতই শোনা যায়। চাল চুরি, গম চুরি, সরকারের দেওয়া বিভিন্ন ভাতা চুরির গল্প তো নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার।
তবে ফেনীর ফুলগাজীর দরবারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ছয় নম্বর ওয়ার্ডের (জগতপুর) মেম্বার কামরুজ্জামান (কামরুল) যে কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তা সব দুর্নীতিকেই যেন হার মানায়! তার পরিবারের সকল সদস্যের নামেই তিনি সরকারের দেওয়া বিভিন্ন ভাতা তুলেছেন। এই তালিকায় স্ত্রী, সন্তান, শ্যালিকা, সন্মন্ধী সবাই আছেন।
ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে থেকেও কামরুল নিজেকে 'মৃত' ঘোষণা করে স্ত্রী সালমা তাহিনুরকে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতা পাইয়ে দিয়েছেন। এছাড়া ছেলে নাভিদুল হাসানের পিতৃপরিচয় গোপন করে গ্রহণ করছেন প্রতিবন্ধী ভাতা। দুই শ্যালিকা উম্মে রুমান ও উম্মে কুলসুম সুখী বিবাহিত জীবনযাপন করলেও পাচ্ছেন বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতা। শ্বশুর নুরেজ্জমান ও শাশুড়ি বিবি আয়েশা পাচ্ছেন বয়স্ক ভাতা। বউয়ের বড় ভাই আনিসুজ্জামান পাচ্ছেন প্রতিবন্ধী ভাতা!
নিজ পরিবারে এত ভাতার কাহিনী নিয়ে ইউপি সদস্য তথা স্থানীয় কৃষক লীগ নেতা কামরুল বলেন, তার ওয়ার্ডের সব প্রাপ্য ব্যক্তিকে ভাতা কার্ড দিয়েই নাকি তিনি নিজের পরিবারের সদস্যদের নাম দিয়েছেন। তার দাবি, ছেলে ২০১৮ সালে রিকশা থেকে পড়ে হাত ভাঙায় তাকে প্রতিবন্ধী কার্ড দেওয়া হয়েছে। তবে ছেলের পিতৃপরিচয় গোপন করার বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি।
তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ভাতা দেওয়ার বিষয়ে বলেন, তারা ভাতা কীভাবে পাচ্ছেন তিনি তা জানেন না।
এদিকে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন, টাকা ছাড়া কামরুল কাউকে কার্ড দেন না। সত্যিকারের অসহায় মানুষ কোনোভাবেই সরকারের এসব সুবিধা পান না। নিজের পরিবারের বাইরে যারা ভাতা সুবিধা ভোগ করছেন তারাও কামরুজ্জামানের পছন্দের মানুষ। এছাড়া এক বছরের টাকা দেওয়ার শর্তেও তিনি বেশ কিছু লোককে বয়স্ক ভাতা কার্ড দিয়েছেন! এই কামরুল এখন দরবারপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক হলেও তিনি আগে ফুলগাজী উপজেলা কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন!
সোনাগাজী উপজেলায় মোট সাত হাজার ৭১৭ জন ভাতা সুবিধা ভোগ করছেন। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন চার হাজার ২৩ জন, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা পাচ্ছেন এক হাজার ৯৬০ জন এবং প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন এক হাজার ৭৩৪ জন। কামরুলের এমন দুর্নীতি নিয়ে ভাতা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ও দরবারপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন মজুমদার বলেন, তার এমন বিষয় তার জানা নেই।