হেফাজতের সাবেক নেতাদের ১৯ মাদ্রাসায় দেশি-বিদেশি অর্থায়ন, কোটি কোটি টাকা লেনদেন 
হেফাজতের সাবেক নেতাদের ১৯ মাদ্রাসায় দেশি-বিদেশি অর্থায়ন, কোটি কোটি টাকা লেনদেন 

নিউজ ডেস্ক । ।

সাবেক নেতাদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকা হেফাজতে ইসলামের ১৯টি মাদ্রাসা ও এতিমখানার হিসাবে কোটি কোটি টাকা আয়ের তথ্য পেয়েছে দুদক। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ১২-১৩ কোটি টাকাও আয় করেছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে জমা হয়েছে ওই টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাধ্যমে হেফাজত নেতাদের ওইসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ৫০ শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৯টি মাদ্রাসা ও এতিমখানার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক পরিচালক আকতার হোসেন আজাদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বিশেষ টিম।

এই অনুসন্ধান তদারক করছেন দুদক মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান।  দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, হেফাজত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে টাকা দান-খয়রাত থেকে এসেছে কিনা- এটা এখন দেখার বিষয় নয়। কোনো অপরাধ দুদকের শিডিউলভুক্ত না হলে সেটা দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় না। যে অর্থ বিদেশ থেকে আসে, সেগুলো ধর্মীয় লেবাসে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা এটা দুদকের দেখার বিষয়।  

তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক অপরাধ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আলেমরা ধরাছোঁয়ার বাইরে বা আইনের ঊর্ধ্বে নন। অপরাধ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  জানা গেছে, অভিযোগটির সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে ওই ৫০ নেতা ও ১৯ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বিএফআইইউতে এরই মধ্যে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। বিএফআইইউ দেশের সব দেশি-বিদেশি ব্যাংক অনুসন্ধান করে ওইসব নেতার ও তাদের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়া টাকার তথ্য সংগ্রহ করে। পরে সেসব তথ্য দুদকের কাছে পাঠানো হয়।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হেফাজতের ওই ১৯ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে থেকে অন্যান্য হিসাবে টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে নেতাদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবেও প্রতিষ্ঠানের হিসাব থেকে টাকা স্থানান্তর হয়েছে কিনা সেসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  এছাড়া ওই ৫০ নেতার ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে। কোন উৎস থেকে টাকাগুলো জমা হয়েছে, সেসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব কারাবন্দী মামুনুল হকের ব্যাংক হিসাবে ছয় কোটি টাকার লেনদেন, মানি লন্ডারিং ও নানা সম্পদের তথ্য রয়েছে দুদকের হাতে।  

যেসব প্রতিষ্ঠানের হিসাবে লেনদেন : চট্টগ্রামের হাটহাজারীর জামিয়া আহম্মদিয়া দারুল উলুম মুইনুল ইসলাম বড় মাদ্রাসা, জামিয়া ইসলামিয়া হামিউস সুন্নাহ মাদ্রাসা, জামিয়া ইসলামিয়া কস্ফাসেমুল উলুম মাদ্রাসা, জামিয়া হামিদিয়া নাছেরুল ইসলাম মাদ্রাসা, মাহমুদিয়া মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা, ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকার সাতমসজিদ রোডের জামি’আ রহমানিয়া আরাবিয়া কওমি মাদ্রাসা।  চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাবুনগর আজিজুল উলুম মাদ্রাসা, আল জামিয়াতুল কোরআনিয়া তালিমুদ্দীন হেফজখানা ও এতিমখানা, ফটিকছড়ি পৌরসভা এলাকার নাজিরহাট আল জামেয়াতুল আরাবিয়া নাছিরুল ইসলাম মাদ্রাসা, ফটিকছড়ির জাফতনগর হাফেজুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানা, উত্তর নিশ্চিতপুরের আজম তালুকদার বাড়ির তালিমুল কোরআন বালক-বালিকা মাদ্রাসা ও এতিমখানা, সামিনগর ২নং দাতমারা ইউনিয়ন পরিষদের ভুজপুরের উত্তর বারমাসিয়া হাফেজুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা, ভুজপুরের দাতমারা তালিমুল কোরআন ইসলামিয়া মাদ্রাসা, দাতমারা ছোট বেতুয়া এলাকার সিরাজুল উলুম মাদ্রাসা, ভুজপুরের কাজীরহাট এলাকার আল জামিয়া ইসলামিয়া এমদাদুল ইসলাম মাদ্রাসা, পশ্চিম ভুজপুরের আল মাহমুদ ইসলামিয়া বালক-বালিকা মাদ্রাসা ও পশ্চিম আধার এলাকার আল মাদ্রাসাতুল ইসলামিয়া আরাবিয়া হেফজখানা ও এতিমখানা বালক-বালিকা মাদ্রাসা।

মেজবাহ খালেদ / এনই / সিয়াইডি ।