আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতের রূপ পাল্টে যায়। জামাত বিএনপির সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে জুনায়েদ বাবু নগরীর অনুসারীরা। বাবু নগরী বর্তমানে হেফাজতের আমীরের দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপি জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি বতর্মান খেলাফত মজলিজের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের ও জমিয়েতে উলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুল রব ইউসুফী হেফাজতের সাথে সমন্বয় ও তথ্য আদান প্রদানের দায়িত্ব পালন করছেন। দু’জনে আবার হেফাজতের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাবু নগরীর অনুসারী বিভিন্ন জেলার হেফাজত নেতা- কর্মীদেরকে সরকার বিরোধী ইসলামী দল এবং বিএনপি জামায়াতের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে নির্দেশনাও দিয়েছে হেফাজত। গত ১৬ জুন হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীর আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহমেদ খোন্দকারের আদালতে তিনি এ জবানবন্দি দিয়েছেন।
চলতি বছরের ২৬ মার্চ হাটহাজারীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা ও ২০১৩ সালের দেশজুড়ে হেফাজতের সহিংসতা চলাকালে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন আজিজুল হক ইসলামাবাদী। গত ১১ এপ্রিল গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে হাটহাজারী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, তিনি ১৯৯৮৬ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বায়তুল মোকাররমের সাবেক খতিব মাওলানা ওবাইদুল হকের সহকারী হিসাবে কাজ করেছেন। ১৯৯৬ সালে নেজাম ইসলাম পার্টির সাথে যুক্ত হন। ২০১০ সালে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্ব নেন।
২০১৩ সালে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ঢাকার শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালে হেফাজতের ইসলামের যে আন্দোলন হয়েছিল সেই সময় তিনি হেফাজতের সারাদেশের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। শাপলা চত্বরের আন্দোলনে যেতে তিনটি বাসে ১৫০ লোক নিয়ে রওনা হলে তাকে চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড়ে পুলিশ আটকে দিলে সেখানেই তিনি সমাবেশ করেন। তিনি প্রয়াত হেফাজত আমীর শাহ আহমদ শফীর ছাত্র। শফীর প্রতি তার যথেষ্ট শ্রদ্ধা ও ভক্তি রয়েছে। কিন্তু শফীর ছেলে আনাস মাদানীর কর্মকা-ে তিনিসহ অনেকে অসন্তুষ্ট ছিলেন।
ইসলামাবাদী তার জবানবন্দিতে বলেন, আহমদ শফীর মৃত্যুর পর তারা হাফেজ জুনাইদ বাবু নগরীকে আমীর হিসাবে স্বীকৃতি দেন। হেফাজতের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে সরকারের বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে তিনি বিভিন্ন জেলার হেফাজত কর্মীদের চাঙ্গা করার উদ্যোগ নেন। এ সময় তিনি ফরিদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও ঢাকা সফর করেন।
জবানবন্দিতে আজিজূল হক ইসলামবাদী বলেন, সরকার যেহেতু তাদের দাবি মেনে নিচ্ছে না, তখন হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি সরকার বিরোধী ইসলামী দল এবং বিএনপি-জামায়াতের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। আহমদ আবদুল কাদের ও আবদুর রব ইউসুফী ২০ দলীয় জোট বিএনপি-জামায়াতের সাথে সমন্বয় ও তথ্য আদানপ্রদান করতেন।
এছাড়া হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির নায়েবে আমীর ও জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতি মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর হেফাজতের দাওয়া সম্পাদক মাওলানা আহমদ আলি কাসেমী, জমিয়তে উলামায়ের যুগ্ম মহাসচিব ও হেফাজতের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সহকারী মহাসচিব গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম হেফাজতের পক্ষ থেকে জামায়াত ও বিএনপির সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখেন।
জবানবন্দিতে হেফাজত নেতা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদীর বাংলাদেশে আগমন ঠেকাতে জুনায়েদ বাবু নগরীর নির্দেশে ২০ দলের সাথে আমরা ঢাকায় বৈঠকও করেছি। বৈঠকে মাওলনা মামুনুল হক, মুফতী মনির কাসেমী, সুনামগঞ্জের সাবেক এমপি হেফাজতের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শাহীনুর পাশা, হাবিবুল্লাহ আজাদী, হেফাজত নেতা নাসির উদ্দিন মুনির, মীর ইদ্রিস, মুফতি হারুন ইজহার, খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, হেফাজতের বর্তমান মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী ও জুনাইদ আল হাবীব উপস্থিত ছিলেন।
মেজবাহ খালেদ/ এনই / সি আই ডি ।