সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় বনে শিকারীর পাতানো ফাঁদে হরিণ, বিষ মিশ্রিত সবজি খেয়ে মরছে
সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় বনে শিকারীর পাতানো ফাঁদে হরিণ, বিষ মিশ্রিত সবজি খেয়ে মরছে

নিউজ ডেস্ক । ।  

শিকারীর পাতানো ফাঁদের বিষ মিশ্রিত সবজি খেয়ে সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় বনে নির্বিচারে মারা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ।  বন কর্মকর্তাদের সঠিক তত্ববধানের অভাবে অব্যাহত হরিণ শিকারের কারনে হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। সম্প্রতি দুটি মৃত হরিণ ও ৪৫ টি ফাঁদ উদ্ধারের পর বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে বনবিভাগের কর্মকর্তাদের। জরুরি ভিত্তিতে অভিযান চালানো এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি না করলে হরিণ  নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের কয়েকটি ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকায় এখনো প্রচুর হরিণ রয়েছে। এসব হরিণ প্রায়ই রাতের অন্ধকারে শীতকালীন সবজি খেতে কিংবা মিঠাপানি পান করতে লোকালয়ে নেমে আসে। হরিণ লোকালয়ে নেমে আসার সুযোগে একশ্রেণির শিকারী  নানারকম ফাঁদ পেতে রেখে হরিণের মাংস বিক্রি করে। বিশেষ করে সৈয়দপুর,মুরাদপুর,বাড়বকুণ্ড ও বাঁশবাড়িয়া সাগর উপকূলে মাঝেমধ্যেই এভাবে হরিণ ধরা পড়া ও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

উপকূলীয় বনবিভাগ সুত্রে জানা গেছে,গত মঙ্গলবার উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের দক্ষিণবগাচতর সাগর উপকূলে বেড়িবাধের কাছে একটি মৃত হরিণ খাচ্ছিল একটি শিয়াল। তা দেখে স্থানীয় কৃষকেরা সংশ্লিষ্ট বিটের কর্মকর্তাকে খবর দেন। পরে বিট কর্মকর্তা গিয়ে হরিণটি মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এর আগে গত বছরের ১৭ নভেম্বর পুলিশের জরুরী সেবা নম্বরে ফোন পেয়ে আরেকটি হরিণ উদ্ধার করে ময়না করে বনবিভাগ। হরিণটি জীবিত উদ্ধার করলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় হরিণটি। হরিণ দুটির ময়নাতদন্ত করেন উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা শাহজালাল মুহাম্মদ ইউনুছ।

বগাচতর বিটের কর্মকর্তা এইচএম জলিলুর রহমান বলেন,সর্বশেষ হরিণটি একটি জমিতে মরা পড়েছিল। তার কিছু অংশ শেয়াল খেয়ে ফেলেছিল। গত বছরের ১৭ নভেম্বরের হরিণটি অসুস্থ হয়ে ঝোপে লুকিয়েছিল প্রাণ বাঁচানোর জন্য। চেষ্টা করেও হরিণটি বাঁচানো সম্ভব হয়নি। দুটি হরিণের চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে। গত কয়েকমাসের মধ্যে ৪৫টি ফাঁদ উদ্ধার করা হয়েছে। ফাঁদগুলো কারেন্টের তার ও রশি দিয়ে করা।  কোনো কোনো জায়গায় ফাঁদের স্থানে হাড়গোরও উদ্ধার করা হয়েছে।

সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম নিজামী বলেন,আমাদের উপকূলীয় এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে হরিণ আছে। হরিণগুলো শুকনো মৌসুমে মিঠা পানির সন্ধানে উপকূলে আসে। এতে হরিণগুলো কখনো শিকারীর ফাঁদে আবার কখনো কৃষকের সবজি খেয়ে কীটনাশকের বিষক্রিয়ার শিকার হয়।

উপকূলীয় বনবিভাগের রেঞ্জ সহযোগী ফরেস্টার খন্দকার আরিফুল ইসলাম বলেন,উপকূলে পানি ও সবজি খেতে এসে অনেক হরিণ মারা পড়ছে। কয়েকদিন আগেও একটি বিশাল হরিণ বিষ মিশ্রিত সবজি খেয়ে মারা গেছে। আমরা সেটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তে প্রমান পেয়েছি। ইতিমধ্যে হরিণ শিকার বন্ধে উপকূলীয় এলাকায় একটি সভা করে এলাকাবাসীকে সচেতন করার উদ্যোগ গ্রহনের প্রস্তুতি চলছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় বলেন,চলতি সপ্তাহে উপকূলে একটি জনসচেতনতা সভা করার কথা ছিল। কিন্তু রেঞ্জ কর্মকর্তার অসুস্থতার কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। আগামী সপ্তাহে যে কোন দিন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,পুলিশ,সাংবাদিক ও বনবিভাগের লোকজন মিলে সভাটি করা হবে। এরপর ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া হবে।

মেজবাহ খালেদ / এন ই / সি আই ডি ;