আল্লামা শফীকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে বাবুনগরী তৈরি করেছিলেন নিজস্ব বলয়  : আদালতে খাদেম এনামুল 
আল্লামা শফীকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে বাবুনগরী তৈরি করেছিলেন নিজস্ব বলয়  : আদালতে খাদেম এনামুল 

 

নিউজ ডেস্ক। ।

হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে হেফাজতে ইসলামের আমীরের পদ থেকে সরিয়ে দিতে হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করেছিলেন। হেফাজত আমীর হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরীর প্রধান খাদেম এনামুল হক ফারুকী আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য দেন।

জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিহান সানজিদার আদালতে তিনি এ জবানবন্দি প্রদান করেন। বিকেলে আদালতে প্রদত্ত জবানবন্দিতে তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসা পরিচালনার বিষয়কে কেন্দ্র করে বাবুনগরীর সাথে আহমদ শফীর দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। মাদ্রাসায় ১০৮ ছাত্রের ভর্তির বিষয়কে কেন্দ্র করে সাধারণ ছাত্রদের ক্ষেপিয়ে তুলে বাবুনগরীর অনুসারীরা। আহমদ শফী মারা যাবার তিনদিন আগে নিজের অনুসারীদের নিয়ে গোপনে বৈঠকও করেছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। বৈঠকে আহমদ শফীকে হেফাজতের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়া ও সাধারণ ছাত্রদের শফী বিরোধী আন্দোলন কিভাবে ক্ষেপিয়ে তোলা যায় তা আলোচনা হয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শফীপুত্র আনাস মাদানীকে হেফাজত থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। শফীর মৃত্যুর দুইদিন পর জুনায়েদ বাবুনগরী মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক এবং একমাস পর হেফাজতের আমীর নিযুক্ত হন। মাদ্রাসা এবং হেফাজত থেকে সরিয়ে দেয়া হয় আহমদ শফীর অনুসারীদের।

হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরীর প্রধান খাদেম এনামুল হক ফারুকী আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে জানান, তিনি ২০১৫ সালে হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসায় দাওরা কোর্সে ভর্তি হন। ২০১৬ সালে জুনায়েদ বাবুনগরীর প্রধান খাদেম হিসাবে নিযুক্ত হন। মাদ্রাসা পরিচালনার বিষয় নিয়ে বাবুনগরীর সাথে হেফাজত আমীর শাহ আহমদ শফীর দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। বাবুনগরী তাঁর অনুসারী আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জুনায়েদ আল হাবিব, মামুনুল হক, মুফতি মনির কাসেমী, আতাউল্লা হাফেজী, নুরুল ইসলাম জিহাদী, জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, নাসির উদ্দিন মুনীর, আহসান উল্লাহ মাস্টার, হাবিবুল্লাহ আজাদীসহ আরো বেশ কয়েকজন অনুসারী নিয়ে নিজস্ব একটি গ্রুপ তৈরি করেন।

এনামুল হক বলেন, হাটহাজারী উপজেলা ও পৌরসভার হেফাজত নেতা মাওলানা জাফর, জাহাঙ্গীর আলম মেহেদী, এমরান শিকদার, ওবায়দুল্লাহ, সোয়াইব জমিরী, মাহমুদুল হাসান, নুর মোহাম্মদ, রিজুয়ান আরমান, সোহেল চৌধুরী, জানায়েদ বিন ইয়াহিয়া, আবু মুছাসহ আরো বেশ কিছু লোক নিজের দলে ভিড়ান বাবু নগরী। এসব লোকজনদের নিয়ে আহমদ শফীকে সরানোর বিষয়ে গোপনে মিটিং করতেন। এরমধ্যে জিয়া, নাদিম, শহিদুল্লাহ, আরিফ, সাকিব, রাজিব, নাছির, ওমর ফারুক, হেলাল ও সাদ নামে বেশ কিছু মাদ্রাসা ছাত্রকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বাবু নগরীর পক্ষে কাজ করতে রাজি করান তিনি নিজেই (এনামুল হক)।

জবানবন্দিতে তিনি আরো বলেন, শাহ আহম শফী মারা যাবার তিন দিন আগে মাদ্রাসায় ছাত্রভর্তি নিয়ে ঝামেলা হয়। তখন জরুরিভাবে নিজের অনুসারীদের নিয়ে মিটিং করেন বাবুনগরী। ছাত্র ভর্তি ইস্যুতে সাধারণ ছাত্রদের আহমদ শফীর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়। সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনের উস্কানি দেয় বাবু নগরীর অনুসারীরা। আন্দোলনরত ছাত্ররা আহমদ শফীর পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষকদের কক্ষ ভাংচুর করে। মুফতি হারুন ইজহার ফেসবুকে আন্দোলনরত ছাত্রদের উস্কানি দেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের ১৭ অক্টোবর বাবুনগরী ও তার অনুসারীদের নিয়ে আহমদ শফীর সাথে মাদ্রাসায় বৈঠক করেন। ওই বৈঠক থেকেই আনাস মাদানীকে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরদিন (১৮ অক্টোবর) সকালে শাহ আহমদ শফি মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকলে বাবুনগরীর নির্দেশে আন্দোলনরত ছাত্রদের ক্ষেপিয়ে তোলে বৈঠক বানচাল করে দেয়া হয়। ওইদিন বিকেলে আহমদ শফির কক্ষে মাদ্রাসার সুরা সদস্য মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, আল্লামা নোমান ফয়েজী, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী ও ওমর ফারুক বৈঠক করে শফিকে পদত্যাগ করতে প্রস্তাব দেন। শফি রাজী না হলে তার কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। এক পর্যায়ে শফিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। মাওলানা শেখ আহমদ ও নোমান ফয়েজী ‘শফী স্বেচ্ছায় পতদত্যাগ করেছে’ এমনটি ঘোষণা দেন মাইকে। এরমধ্যে শাহ আহমদ শফি অসুস্থ হয়ে পড়লে বাবুনগরী ও তার পক্ষের লোকজনের উস্কানিতে আন্দোলনরত ছাত্ররা চিকিৎসার জন্য শফিকে বাইরে নিতে বাধা দেয়।