সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি । ।
ওরা বরাবরই প্রথম স্থান ধরে রাখছে কবিতা আর ভাষণ প্রতিযোগিতায় । শুরুর দিকে স্কুল পর্যায়ে প্রথম হলেও এখন তারা উপজেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। মেধাবী এ দুই শিক্ষার্থী হলেন সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী হাজী টিএসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণির ছাত্রী তাওসিয়া ফাইরুজ আলম তৌসিন ও সীতাকুণ্ড বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী পারজানা আক্তার।
তাওসিয়ার কবিতা আবৃত্তি যেমন মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ঠিক তেমনি পারজানার কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণও বিদ্যালয় কাঁপাচ্ছে। ১৫ আগষ্ট সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ওই দুই শিক্ষার্থী পুরস্কার গ্রহণ করেন। এসময় তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সীতাকুণ্ডের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব দিদারুল আলম, উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহাদাত হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য আ ম ম দিলশাদ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ, মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে রচিত একাধিক কবিতা আয়ত্ত করেছেন তাওসিয়া ফাইরুজ আলম তৌসিন। কবিতা আবৃত্তিতে তার রয়েছে বেশ সুনাম। ইতিমধ্যে তার সুনাম পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। খ্যাতির ঝুরিতে অর্জনও কম নয় তার। কবিতা আবৃত্তিতে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান ধরে রেখেছে সে। উপজেলা পর্যায়ে কবিতা আবৃত্তিতে প্রথম হয়েছেন দুইবার। এছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে পাঁচ বার শ্রেষ্ঠ বিতার্কিকের স্থান দখল করেন তাওসিয়া। এবারও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী (১৫ আগষ্ট) উপলক্ষে উপজেলা পর্যায়ে কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় "আপনি আমাদের ক্ষমা করবেন বঙ্গবন্ধু " কবিতাটি আবৃত্তি করে প্রথম স্থান অধিকার করেছে সে। ছোটবেলা থেকে কবিতা প্রেমী মেধাবী তাওসিয়া ফাইরুজ সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী হাজী টিএসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। সে ওই এলাকার মোঃ মাহাবুবুল আলম ও মোছাঃ শামীমা আক্তার দম্পতির কন্যা। কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক, বক্তৃতা ছাড়াও সৃজনশীল লেখা ও কবিতা রচনায় আলাদা গুণের অধিকারী তাওসিয়া একাডেমিক ফলাফলেও রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুল ও অষ্টম শ্রেণিতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি অর্জন করার পাশাপাশি স্কুলের বার্ষিক ফলাফলে পেছনে ফেলেছেন অনেককে। ক্লাসের অন্য দশজন শিক্ষার্থীর চেয়ে আলাদা তাওসিয়া ফাইরুজ আলম তৌসিন এখন বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। আর সেই স্বপ্ন পূরণে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার পাশাপাশি সংস্কৃতিকে নিয়মিত চর্চা করছেন কৃতি এ ছাত্রী। সকলের কাছে দোয়া চেয়ে তাওসিয়া ফাইরুজ তার অভিমত ব্যক্ত করেছেন । তাওসিয়া বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি কবিতা, বক্তৃতা ও বিতর্ক চর্চা করছি নিয়মিত। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতাগুলো আমার খুব ভালো লাগে। কবিতার প্রতিটি লাইন আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। কবিতার শব্দ ও ছন্দ আমার মনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে জাগিয়ে তোলে। শিশুদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালনের ও তার প্রতিফলনের জন্য তাঁকে নিয়ে লেখা কবিতাগুলো যথেষ্ট। তাওসিয়া ফাইরুজ আরোও বলেন, বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই। মানবের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে চাই। সেইসাথে আবৃত্তিকার ও সংবাদ পাঠিকা হওয়ার ইচ্ছাও আছে আমার। তাওসিয়ার বাবা মোঃ মাহবুবুল হক বলেন, সে ছোটবেলা থেকেই বিশেষ কিছু করতে পছন্দ করতো। প্রথম শ্রেণি থেকে কবিতা তার মুখের খোরাক। যেকোন কবিতা সে সহজে রপ্ত করতে পারে। আমরাও তার ভালো লাগাকে প্রাধান্য দিই। লেখাপড়া করে দেশের সেবা করুক আমাদের মেয়ে সেই আশায় বুক বেঁধেছি। আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় আসা সমাজকর্মী বলেন, মেয়েটির আবৃত্তি শুনে মুগ্ধ হয়েছি। সত্যিই তার মাঝে অসাধারণ প্রতিভা লুকিয়ে আছে। সে ভবিষ্যতে আরোও ভালো করতে পারবে। তার কবিতা আবৃত্তি শুনে আমার চোখে জল এসে গেছে। যেন ১৫ আগষ্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পুরো পরিবারকে ঘাতকরা নৃশংসভাবে হত্যা করে যে কালো অধ্যায় রচনা করেছেন সে দৃশ্যপট ভাসছে। তার আবৃত্তিতে কবিতা আবৃত্তির যে ভঙ্গি সেটিও ছিল প্রশংসনীয়। তাওসিয়া বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেন, তাওসিয়া ফাইরুজ আলম তৌসিন আমাদের বিদ্যালয়ের গৌরব। তার অর্জন বিদ্যালয়ের সুনাম বয়ে আনছে। সবার উৎসাহ ও সহযোগিতা পেলে সে আরো এগিয়ে যাবে।
তাওসিয়ার মতোই মেধাবী ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী পারজানা আক্তার। সহজেই যেকোন সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের ১৭ মিনিটের ভাষণটি সে মুখস্থ বলতে পারে। ভাষণে বঙ্গবন্ধুর মতো অঙ্গ-ভঙ্গিও তার রপ্ত। ২০২০ সালে উপজেলা পর্যায়ে ভাষণ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে এবারও সেই ধারাবাহিকতায় ধরে রেখেছে পারজানা। কেবল ভাষণই নয় কবিতা আবৃত্তি, গান, চিত্রাংকন, ব্যাডমিন্টন ও ফুটবল খেলায়ও পারজানা সমান পারদর্শী। সবার দোয়া নিয়ে তাওসিয়ার মতো পারজানাও বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন বুঁনছেন রীতিমতো। কৃতি শিক্ষার্থীর পারজানা সীতাকুণ্ড উপজেলার সীতাকুণ্ড পৌরসভার উত্তর ইদিলপুর গ্রামের ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের ছোট কন্যা। পারজানার শিক্ষিকা ফারজানা চৌধুরী বলেন, স্কুলের নতুন ছাত্রী হলেও তার প্রতিভা দেখে আমরা মুগ্ধ। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সে বেশ ভালোভাবেই আয়ত্ত করেছে। ভবিষ্যতে পারজানা আরোও ভালো করতে পারবে বলে বিশ্বাস রাখি।