রামু প্রতিনিধি । ।
১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫ সাল, সেদিন ছিল মঙ্গলবার। বিমানে করে বঙ্গবন্ধু কক্সবাজার নেমে প্রথমে সমুদ্র সৈকতে ঝাউচারা রোপণ করেন। সেখান থেকে চলে আসেন রামুতে। রামু উপজেলা গেট থেকে চৌমুহনী স্টেশন পর্যন্ত জলের ফোয়ারা, সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির ঐহিত্যসমৃদ্ধ বেশকিছু গেটসহ তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য নানা আয়োজন করেছিলাম আমরা। কিন্তু তিনি গাড়ি থেকে নামেননি এবং সংবর্ধনা নেননি। তবে আমরা তাঁর গাড়ির ওপর ফুল ছিটিয়েছিলাম। অনেকটা পুষ্পবৃষ্টির মতো করে। এরপর সরাসরি তিনি গাড়ি নিয়ে রামু রাবার বাগান চলে যান। এভাবেই বঙ্গবন্ধুর রামু সফরের স্মৃতিচারণ করছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, রামুর সাবেক এমইউপি গোলাম কবির মেম্বার। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু যতবার রামুতে আসেন অন্য অনেকের সঙ্গে এই গোলাম কবির তাঁর সান্নিধ্যে ছিলেন । যে কারণে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর হিসাবে পরিচিত আওয়ামী লীগের এই নেতা।
গোলাম কবির বলেন, সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রামু রাবার বাগানে গিয়ে রাবার শিল্পের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ঠদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আগে রাবার বাগানের মাটিতে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত রাবারগুলো সংগ্রহ করা হতো না। সেদিন তিনি বাগানে ঢুকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন এবং একটি গাছের গোড়া থেকে নিজের হাতে পরিত্যক্ত রাবার তুলে নেন। ওই দিনই তিনি ওই পরিত্যক্ত রাবারও সংগ্রহের নির্দেশ দেন। তিনি উদাহরণ সরূপ বলেছিলেন, ভালো রাবার বিশ টাকা হলে এগুলো অন্তত অর্ধেক দামে তো বেচা যাবে। সেদিন থেকে এখনও পর্যন্ত রামু রাবার বাগানে পরিত্যক্ত রাবারও সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সেই সোফাটি সংরক্ষিত আছে রামু রাবার বাগানে: গতকাল সোমবার দুপুরে রামু রাবার বাগান রেস্ট হাউসে গিয়ে দেখা যায়, যে সোফাটিতে বঙ্গবন্ধু বসেছিলেন সেই সোফাটি ড্রইং রুমের এক কোণায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। একটি কাঁচের বঙ বানিয়ে চেয়ারটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। বঙটির ঠিক ওপরে রাখা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর রাবার বাগান পরিদর্শনের তথ্যসহ একটি বাঁধাই করা তথ্যচিত্র। এর ওপরে রাবার গাছের সামনে বঙ্গবন্ধুর ছবিও।
রামু রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায় বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে ১৯৭০ এবং ১৯৭৫ সালে দুইবার বঙ্গবন্ধু রামু রাবার বাগানে আসেন। যে কারণে এই বাগান এবং রেস্ট হাউস জুড়ে তাঁর নানান স্মৃতি রয়েছে। এখানে এসে বঙ্গবন্ধু একটি সোফায় বসেছিলেন। তাঁর স্মৃতি রক্ষায় সেই সোফাটি আমরা কাঁচের বঙে সংরক্ষণ করে রেখেছি।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য সোফাটির বিষয়ে অবগত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো এটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করি। এই দেশ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুর কি অবদান ছিল, নতুন প্রজন্মের কাছে তা তুলে ধরতে সেই থেকে রামুর বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে এই সোফাটির প্রদর্শনী করা হচ্ছে। বর্তমানে রামু উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় রাবার বাগান কর্তৃপক্ষ সোফাটি সংরক্ষণ করেছে।
মেজবাহ খালেদ/ এন ই / সি আই ডি ;