বিশেষ প্রতিবেদক । ।
ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষার জন্য সীতাকুন্ডে সাগর উপকূলের ভাটেরখীল এলাকায় কয়েক বছর পূর্বে উপকূলীয় বন বিভাগ প্রায় ১০ একর বনভূমির উপর একাধিক জাতের অসংখ্য গাছ লাগিয়েছিলেন । আর সেখান থেকে অবাইধভাবে গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে উপকূলীয় বন । ইতিমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে এক হাজারের অধিক ‘গেওয়া, গোয়া ও বাইন গাছ ।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, ‘সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত বনের জায়গায় মাছের ঘের (প্রজেক্ট) করতে ক্রমান্বয়ে বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বনের লাগানো গাছগুলো কাটা হচ্ছে। আর গাছ কাটার পর প্রভাবশালীরা তা দখলে নিচ্ছে। ইতোপূর্বে ওই এলাকায় একই কায়দায় কয়েক একর বনের ভূমি দখল করেছে প্রভাবশালীরা। আর তারা দখলকৃত জায়গায় মাছের ঘের করছেন।’
সীতাকুন্ড উপকূলীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, ‘নতুন গাছের খুঁটি দিতে মূলত ওই গাছগুলো কাটা হচ্ছে। আর ওই এলাকায় মাছের ঘেরের জন্য দখল করা জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে আমরা নোটিশ করেছি।’
সরেজমিনে সোমবার দুপুরের দিকে উপজেলার ভাটেরখীল সাগর উপকূলে গিয়ে কথা হয় বন কর্মচারী আবুল হোসেন আজাদের (পদবি বিএম) সঙ্গে। এ সময় তিনি একটি ছাতা মাথায় দিয়ে নতুন রোপণকৃত গাছের চারা পাহারা দিচ্ছিলেন। আর তার কয়েকশ গজ দক্ষিণে উপকূলের সবুজ বনায়নের গাছ কাটছে কয়েকজন যুবক- এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। একই সময় ওই জায়গার উত্তরের দুইটি স্কেভেটর দিয়ে গাছ কেটে মাছের ঘের (প্রজেক্ট) করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ বন কর্মচারী বলেন, গাছ কাটা ও মাছের ঘের নির্মাণ কারা করছে আমি জানি না। আমি সকাল ৮ টায় আসি বিকাল ৪ টার পর চলে যাই। আমার কাজ চারা পাহারা দেওয়া। বাকি বিষয় রেঞ্জার ও বিট কর্মকর্তারা দেখশোনা করেন। নতুনভাবে রোপণকৃত গাছের চারা গরু ছাগল থেকে রক্ষার জন্য আমাকে বলা হয়েছে’।
স্থানীয় বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, ছাবের আহমদ ও আলতাফ উদ্দিন বলেন, উপকূলের সবুজ বেষ্টনীর জায়গাগুলো তাদের পূর্ব পুরুষদের। আরএস খতিয়ানে তাদের রেকর্ড আছে। আশি ও নব্বর দশকে বন বিভাগ এখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগায়। আর যেসকল জায়গা খালি ছিল সেখানে কৃষি কাজ করতো তারা। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের মানুষ রক্ষা পেতে বন বিভাগ বনায়ন করেন। কিন্তু সম্প্রতি কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বনের গাছ কেটে ওই জায়গাগুলো মাছের ঘের করছে। আবার অনেকে সংরক্ষিত উপকূলীয় বনের জায়গা থেকে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে তা বিক্রি করছে। ফলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা যায়, গত এক সপ্তাহ ধরে সীতাকুন্ডের সাগর উপকূলে সবুজ বেষ্টনীর আওতায় বন বিভাগের লাগানো প্রায় ১০ একর জায়গায় ২/৩ হাজারের অধিক ছোট বড় ‘গেওয়া, গোয়া ও বাইন’ গাছ কেটে ফেলা হয়। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই গাছ কাটা হচ্ছে বলে একাধিক স্থানীয় অধিবাসী অভিযোগ করেন। প্রতিদিন ৮-১০ জন শ্রমিক এসব কাছ কাটছে বন বিভাগের লোকদের সামনেই। কিন্তু বন কর্তারা দেখেও না দেখার মতো আচরণ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাছ কাটার দায়িত্বে থাকা এক যুবক বলেন, ‘ত্রিশ হাজার টাকা কন্ট্রাক্টে এ গাছগুলো কাটছি। এক সপ্তাহ ধরে কাটছি, আরো কয়েকদিন লাগবে। স্থানীয় বন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম আমাদের কয়েকজনকে গাছগুলো কাটতে কন্ট্রাক্ট দিয়েছে’।
উপকূলীয় বন বিভাগ চট্টগ্রাম সীতাকুন্ড রেঞ্জের রেঞ্জার মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, নতুন গাছ লাগাতে গাছগুলো কাটা হচ্ছে। কাটা গাছের জায়গায় মাউন্ড নামে নতুন প্রজাতির গাছ লাগানো হবে। তবে গাছগুলোর কারণে কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে কিনা তার কোনো উত্তর তিনি দিতে পারেননি।
তবে সহকারী রেঞ্জার খন্দকার আরিফুল ইসলাম বলেন, যে গাছগুলো কাটা হয়েছে তা সঠিক হয়নি। এতোবড় গাছ কাটার কোনো সুযোগ নাই। খুঁটির জন্য গাছের ডাল কাটবে, কিন্তু কেন গাছগুলো কাটছে আমরা সরেজমিনে খবর নিব।’।
এলাকাবাসীর অভিযোগ এবং গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের যে কর্মকর্তা কাজে লাগিয়েছেন তিনি সীতাকুন্ড ভাটেরখীল ফরেস্টের বিট কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। এ বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
মেজবাহ খালেদ / এন ই / সি আই ডি ;