আবারো দখলের কবলে ফৌজদারহাট - বায়েজিদ লিংক রোড, উঠছে নানান নামে সাইনবোর্ড
আবারো দখলের কবলে ফৌজদারহাট - বায়েজিদ লিংক রোড, উঠছে নানান নামে সাইনবোর্ড

বিশেষ প্রতিবেদক । ।  

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ফৌজদার হাট - বাইপাস সড়কের পাশের খালি জায়গায় আবারো নজরে পড়েছে দখলদারদের । স্থাপিত হচ্ছে নতুন নতুন স্থাপনা ।  ইট , বালি ও স্থাপনার সামগ্রী রাখা হয়েছে রাস্তার দুপাশে ।     

সম্প্রতি ভূমিদস্যু চক্রেরও চোখ পড়েছে নতুন সড়কটি নিয়ে। সড়কটি ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়ার পর থেকে আশেপাশের পাহাড় টিলা দখল বেদখলে মরিয়া হয়ে উঠে অসংখ্য চক্র। সাম্প্রতিক সময়ে সড়কটির পাশে অসংখ্য স্পটে উঠছে নতুন নতুন খুঁটি। বানানো হচ্ছে নতুন নতুন টিনঘেরা স্থাপনাও। দিন যতই গড়াচ্ছে দৃশ্যমান হচ্ছে এসব দখল বেদখলের চিত্রও। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশি সহযোগিতায় রাতের আঁধারে চলছে দখল বেদখলের এ প্রতিযোগিতা।

জানা যায়, বায়েজিদ লিংক রোডের দুই পাশে প্রভাবশালীরা নানান নামে সাইনবোর্ড তুলছে। আবার সিডিএর এলাইনমেন্টের জায়গাও দখল করছে অনেকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সিডিএর রাস্তার পাশে নিজেদের সীমানা প্রাচীরের বাইরে রাস্তার লাগোয়া পর্যন্ত সৌন্দয্য বর্ধন কর্মসূচির সাইনবোর্ড টাঙিয়ে কমপক্ষে ৬ ফুট উচ্চতার স্টিলের শক্ত ঘেরা দিয়েছে বেঙ্গল ব্রিকস ইন্ডাস্ট্রিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। একইভাবে আশেপাশের অনেক পাহাড়ে নতুন করে পোঁতা হয়েছে আরসিসি পিলার। সম্প্রতি এশিয়ান ইউনিভার্সিটির পাহাড় ধস শুরু হওয়ার পর পাহাড়ের পাদদেশে খুঁটি দিয়ে একটি বিরাট জায়গা ঘেরাও করে স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছে একটি চক্র। আবার সড়কটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রার বিরুদ্ধেও জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে। আবার জঙ্গল সলিমপুর ও জাফরাবাদ এলাকায় প্রবেশ মুখগুলোর আশেপাশে গত কয়েক মাসের মধ্যে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। কয়েকটি স্পটে অস্থায়ী দোকান নির্মাণ করে কেউ ব্যবসা করছেন। এখানে রাস্তার ধারে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি পান সিগারেট ও চায়ের টং দোকান। আবার পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠেছে ডেইরি ফার্মও।

স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাহাড়ের পাদদেশে কিংবা রাস্তার ধারে দখল বেদখল কিংবা খুঁটি পোঁতার সব কাজই চলে রাতের আঁধারে। টং দোকানগুলো দখলদারদের সোর্স হিসেবে কাজ করে। দখল হওয়া জায়গায় দিনের বেলা কেউ এলে এসব সোর্সের মাধ্যমে খবর চলে যায় প্রভাবশালী দখলদারদের কাছে।

ওই সড়কের পাশে সিডিএর ঠিদাকারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের দখল বেদখলের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. ইউসুফ  বলেন, ‘আমরা বায়েজিদ লিংক রোডের পাশে ৭ কানি জায়গা নিয়েছি। আমাদের পাশে স্পেক্ট্রা ৩ কানি জায়গা নিয়েছে। স্পেক্ট্রার জমির পাশ দিয়ে আমাদের ৩০ ফুটের চলাচলের রাস্তা রয়েছে। তিনদিন আগে রাতের বেলা সিকিউরিটির লোকদের বেঁধে রেখে স্পেক্ট্রা বুলডোজার দিয়ে আমাদের সব স্থাপনা ভেঙে দিয়েছে। ওইসময় পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করেছে। পরে সীতাকুণ্ড থানায় গেলেও দুইদিন বসিয়ে রেখে থানা পুলিশ আমাদের মামলা নেয়নি।’

এ বিষয়ে স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্সের প্রকল্প পরিচালক রবিউল হক বলেন, ‘আমাদের জায়গার উপর তারা স্থাপনা নির্মাণ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মুখপাত্র দিদার সাহেবের সাথে কথা বলেন।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক নাছির উদ্দিন দিদার বলেন, ‘এই প্রকল্প করতে গিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর আমাদের ৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল। মামলাটি এখনো আদালতে বিচারাধীন। আমরা ৩৩৩ শতক জায়গা একসাথে কিনেছি। আমরা বাউন্ডারি ওয়াল দিয়েছি। ওখানে বিল্ডিং করেছি। ওখানে এখন একটি গ্রুপ এসে আমাদের জায়গার উপর দিয়ে রাস্তা করে ফেলছে। সেখানে আমাদের লোকজন দিয়ে বাঁধা দিয়েছি। আমরা এখানে অনুমতি নিয়ে পার্ক করার চিন্তাভাবনা করেছি।’ তিনি নিজেকে মীরসরাই আরশিনগর ফিউচার পার্কের মালিক বলে দাবি করেন।

এ বিষয়ে বায়েজিদ-ফৌজদার হাট লিংক রোড প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদ বিন আনোয়ার বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পে নির্মিত রাস্তার বাইরে কমবেশি ১০ফুট জায়গা রয়েছে। এশিয়ান ইউনিভার্সিটির পাহাড়গুলোর স্লোপ করার জন্যেও জায়গা রাখা আছে।’

উপ-প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল আলম বলেন, ‘পুরো সড়কটির জন্য ১২০ফুট এলাইনমেন্ট করা আছে। কিছু জায়গায় ৮০ ফুট রাস্তা হয়েছে। আবার কিছু জায়গায় এলাইনমেন্ট থাকলেও অধিগ্রহণ হয়নি। প্রকল্পের প্রয়োজনে এসব জায়গাও নেওয়া হবে। এখানে এখন বেশ কিছু স্থানে দখল বেদখল চলছে। ওখানে প্রকল্পের জায়গা থাকলে কিংবা প্রকল্পের প্রয়োজন হলে যে কারো জায়গা আমরা দখলমুক্ত করবো কিংবা অধিগ্রহণ করে কাজ করবো।’

জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসনে ঢাকাগামী যানবাহনগুলোর নগরীতে আসাযাওয়া নির্বিঘ্ন করতে ১৯৯৭ সালে বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড করার উদ্যোগ নেয় সিডিএ। নানান জটিলতার কারণে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটি দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে। বর্তমানে প্রকল্পের মূল সড়ক নির্মাণ শেষ হয়েছে। ফৌজদারহাট প্রান্তে একটি ওভারপাস নির্মাণ শেষ করার পাশাপাশি প্রকল্পের জন্য কাটা খাড়া পাহাড়গুলো নতুন করে রক্ষণাবেক্ষণ করার মাধ্যমে পুরো প্রকল্পটি শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সিডিএ কর্মকর্তারা।

দৈনিক আজাদী