সীতাকুণ্ডের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল হাফিজ, গুল আহমেদ ও আরআর জুট মিলস  বেসরকারি খাতে, মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে ইজারা !
সীতাকুণ্ডের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল হাফিজ, গুল আহমেদ ও আরআর জুট মিলস  বেসরকারি খাতে, মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে ইজারা

বিশেষ প্রতিবেদক । ।  

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) দাবি, বন্ধ থাকা ১২টি পাটকল বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ২৯টি প্রস্তাব বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই ইজারা দেওয়ার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে।

বছরের পর বছর লোকসান গুনতে থাকা ২৫টি পাটকল গত বছরের ১ জুলাই বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর পাটকলগুলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দিয়ে চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সেটিও গত ১৩ মাসে সম্পন্ন হয়নি। ফলে চালু হয়নি একটি পাটকলও।

জানা যায়, প্রথম পর্যায়ে ১৭টি পাটকল ইজারা দেওয়ার জন্য গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বিজেএমসি। সেগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের হাফিজ জুট মিলস, গুল আহমেদ জুট মিলস, কেএফডি জুট মিলস, এমএম জুট মিলস, আরআর জুট মিলস; ঢাকা অঞ্চলের ইউএমসি জুট মিলস, বাংলাদেশ জুট মিলস, রাজশাহী জুট মিলস, জাতীয় জুট মিলস এবং খুলনা অঞ্চলের প্লাটিনাম জুবেলি জুট মিলস, ক্রিসেন্ট জুট মিলস, ইস্টার্ন জুট মিলস, খালিশপুর জুট মিলস, দৌলতপুর জুট মিলস, স্টার জুট মিলস, যশোর জুট মিলস ও কার্পেটিং জুট মিলস।

আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকার পর দেশি-বিদেশি ২৪টি প্রতিষ্ঠান ১৪টি পাটকল ইজারা নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথকভাবে ৫৯টি প্রাথমিক প্রস্তাব জমা দেয়। তখন খুলনা অঞ্চলের খালিশপুর, প্লাটিনাম ও স্টার জুট মিলস ইজারা নেওয়ার জন্য কোনো প্রস্তাব আসেনি। প্রাথমিক প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করে ৪৮টির একটি তালিকা তৈরি করে বিজেএমসি। এসব প্রস্তাব যেসব প্রতিষ্ঠান দিয়েছে, তাদের চূড়ান্ত পরিকল্পনা পাঠাতে গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল সংস্থাটি।

শেষ পর্যন্ত ১২টি পাটকল ইজারা নেওয়ার জন্য ২৯টি চূড়ান্ত পরিকল্পনা আসে। এবারে চট্টগ্রামের এমএম ও নরসিংদীর ইউএমসি জুট মিলস নিতে কোনো প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখায়নি। আর ২৯টি চূড়ান্ত পরিকল্পনার মধ্যে ভারতের মোহন জুট ও প্যাসিফিক জুট মিলসহ চারটি পাটকল ইজারা পেতে আবেদন করেছে। সেগুলো হচ্ছে যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, ইস্টার্ন জুট মিলস, কার্পেটিং জুট মিলস ও দৌলতপুর জুট মিলস। আর যুক্তরাজ্যের জুট রিপাবলিক চেয়েছে সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিলস।

বিজেএমসির কর্মকর্তারা জানান, মূল্যায়ন কমিটি প্রস্তাবগুলো সাতটি পয়েন্টে র‍্যাঙ্কিং করেছে। তারপরই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

দেশে বেসরকারি পাটকল লাভের মুখ দেখলেও বিজেএমসির পাটকলগুলো বছরের পর বছর লোকসান গুনছিল। ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত পাঁচ অর্থবছরে বিজেএমসির এই পাটকলগুলো ২ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা লোকসান দেয়। আর পাটকলগুলোর পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়ায় ১০ হাজার কোটি টাকা। লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছাঅবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানোর প্রক্রিয়ায় গত বছরের ১ জুলাই পাটকলগুলো বন্ধ করে সরকার।

১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির এক আদেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন, পরিত্যক্ত ও সাবেক ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের ৭৮টি পাটকল নিয়ে বিজেএমসি গঠিত হয়। ১৯৮১ সালে মিলের সংখ্যা বেড়ে হয় ৮২। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের সময় ৩৫টি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। আটটি পাটকলের পুঁজি প্রত্যাহার করা হয়। ১৯৯০ সালের পর বিশ্বব্যাংকের পাট খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ১১টি পাটকল বন্ধ, বিক্রি ও একীভূত করা হয়। ২০০২ সালের জুনে বন্ধ হয় আদমজী জুট মিল। বিজেএমসির অধীনে থাকা ২৬টি পাটকলের মধ্যে গত বছরের জুন পর্যন্ত চালু ছিল ২৫টি। এগুলোর মধ্যে ২২টি পাটকল ও ৩টি ননজুট কারখানা।

বিজেএমসির ২৬টি পাটকলের মোট জমির পরিমাণ ১ হাজার ৩১৩ একর। এর মধ্যে বর্তমানে যে ১২টি পাটকল ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, সেখানে জমির পরিমাণ ৬৮৯ একর। সর্বোচ্চ ১১৩ একর জমি রয়েছে খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলসের।

জানতে চাইলে বিজেএমসির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রউফ বলেন, ‘আমরা বিজেএমসি থেকে ১২টি পাটকল ইজারা দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় যেসব প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার অনুমোদন দেবে, সেটিই আমরা চূড়ান্ত করব। তারপর আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ২৪ মাসের ভাড়া অগ্রিম হিসেবে জমা দেওয়ার জন্য চিঠি দেব। সেই টাকা জমা হলেই ইজারাগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি হবে। আমাদের তরফ থেকে দেরি হওয়ার আর সুযোগ নেই। তবে অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো যদি অগ্রিম টাকা জমাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় নেয়, তাহলে আমাদের কিছু করার থাকবে না।

সুত্র. প্রথম আলো ।

মেজবাহ খালেদ/ এন  ই / সি আই ডি;