কাইয়ুম চৌধুরী । ।
সমুদ্র উপকূলের বেঁড়ীবাঁধ ও জানমাল রক্ষাকারী ঝাউগাছ গাছ কাটার মহোৎসব চলছে সীতাকুণ্ডে । একটি প্রভাবশালী মহল রাতের আধারে বেশী মজুরী দিয়ে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ও উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত হাজার মানুষের জান মাল ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস থেকে রক্ষার জন্য সরকারি ভাবে রোপন কৃত গাছ কেটে উজাড় করছে। গাছ কাটার আড়ালে প্রভাবশালীদের পাশাপাশি একটি বৃহৎ কোম্পানীও জড়িত রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
সমুদ্র উপকূলের জায়গা দখল করতে স্থানীয় ভূমিদস্যুদের ব্যবহার করে দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা এই গাছগুলো কৌশলে লাখ লাখ টাকা খরচ করে কেটে ফেলছে বলে স্হানীয়রা জানায়। উক্ত গাছগুলো নিধনের সাথে দূর্নীতিবাজ বন কর্মকর্তারাও জড়িত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ রয়েছে।
সীতাকুণ্ড উপজেলার বাশঁবাড়ীয়া ইউনিয়নের উত্তর সীমানা বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের দক্ষিণ নডালিয়া ও কৃষ্ণপুর মৌজার অন্তর্গত সাগর উপকূলীয় এলাকায় শতাধিক ঝাউ ও আকাশ মনি গাছ গত রোববার থেকে রাতের আঁধারে একটি সংঘবন্ধ বৃক্ষ নিধনকারি চক্র কাটতে থাকলে স্থানীয় অধিবাসীরা উপকূলীয় বন কর্মকর্তাদের মোবাইলে জানালেও তারা ঘটনাস্থলে যাননি। ঘটনার ৩দিনের মাথায় ১৪সেপ্টেমবর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় এলাকাবাসী স্বপ্রনোদিত হয়ে নিজেরা জব্দ করে কাটা গাছের টুকরো ভর্তি একটি পিকআপ। পরবর্তীতে বন কর্মকর্তারা এসে জব্দ করা ওই গাছগুলো সীতাকুণ্ড সদর রেঞ্জ অফিসে নিয়ে যান। গাছ কাটার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী জোরালো ভূমিকা থাকলেও বন কর্মকর্তাদের উদাসিনতায় ও দায়িত্বহীনতায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।বন বিভাগ ও স্হানীয় প্রভাবশালীরা একটি বৃহৎ কোম্পানীর হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করছে।
উল্লেখ্য যে, এঘটনার আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলার ভাটেরখীল সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় ৫ একর উপকূলীয়ও বনভূমির বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো গাছ কাটার ঘটনা ঘটে রাতের আধারে। সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন জানান, গত রোববার থেকে বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের দক্ষিণ নডালিয়া ও কৃষ্ণপুর মৌজার সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় শতাধিকেরও বেশি বড় বড় ঝাউ ও আকাশ মনি গাছ কেটে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছিলো ভূমি ও বৃক্ষ খেকু দস্যু দলের সদস্যরা। বন কর্মকর্তাদের বারবার ফোন করলেও তারা গাছগুলো রক্ষা করতে আসেনি।
১৯৯১ সালে প্রলয়নকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে এই উপকূলে ব্যাপক জান মালের ক্ষয় ক্ষতি হয়েছিলো। পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীর আওতায় এই গাছগুলো সরকারিভাবে উপকূলীয় বন বিভাগ রোপন করেছিল।
সূত্রে জানা যায়,স্হানী মোহাম্মদ আলী নামে এক ব্যক্তির সাথে সমুদ্র উপকূলের গাছগুলো কাটার জন্য ২ লাখ টাকা চুক্তি করেন নডালিয়া বন এলাকার বিট কর্মকর্তার সাথে। চুক্তি আলোকে মোহাম্মদ আলীসহ কয়েকজন লোক গত রোববার থেকে গাছগুলো নিধন শুরু করে। কাটার পরে গাছগুলো টুকরো টুকরো করে ট্রাকে করে নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন করাতকলগুলোতে বিক্রি করে দেয়। আর বিক্রিকৃত টাকা ভাগভাটোয়ারা হয় বন কর্মকর্তা ও বৃক্ষ নিধনকারি দস্যুদের মাঝে।
এলাকাবাসী জানান, গাছ কাটার পর পরিত্যক্ত সমুদ্র উপকূলের জায়গাগুলো একটি শীর্ষ স্থানীয় শিল্পপতিষ্ঠানের মালিকের কাছে উচ্চদামে দখল সত্বমূলে হস্তান্তর করবে ভূমিদস্যুরা। বন কর্মকর্তাদের যোগসাজোসে উপকূলীয় বনের লাগানো গাছগুলো কাটাছে বলে দাবি এলাকাবাসীর।
সীতাকুণ্ড রেঞ্জ কর্মকর্তা কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কারা গাছ কেটেছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। এক পিকআপ গাছ স্থানীয় এলাবাসী জব্দ করে আমাদের খবর দিয়েছিল। সেই সূত্রে আমার ঘটনাস্থলে এসে ওই পিকআপটি গাছসহ জব্দ করি। তবে কয়টি গাছ কাটা হয়েছে জানা নেই বলে সাংবাদিকদের জানান। গাছ কাটার অভিযোগ বন আইনে মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
নডালিয়া ফরেস্টের বিট কর্মকর্তা আবদুস সালামকে মোবাইলে বারবার ফোন করলেও তিনি মোবাইল ধরছেননা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্হানীয়রা জানায়,প্রায় ৩০ বছর বয়সী এই গাছগুলো জলোচ্ছাসে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে,গাছগুলো কাটা হলে এলাকাবাসীর নিরাপত্তা অনিশ্চয়তা দেখা দিবে,সাথে সাথে কোন বৃহৎ কোম্পানীর দখে চলে যাবে।
মেজবাহ খালেদ / এন ই / সি আই ডি;