সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি । ।
সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের ৩নং মান্দারীটোলা ওয়ার্ডের এলজিইডির আওতাধীন ১৩ কোটি টাকার সড়ক সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও হরিলুটের অভিযোগে উঠেছে। তাছাড়া রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই ঢালাইয়ের কাজ চলছে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ ৬ মাসে যেখানে রাস্তা সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার কথা সেখানে ১৫ দিনের মধ্যে অনিয়ম ও রাস্তার টাকা হরিলুটের মধ্য দিয়ে রাস্তার কাজ তাড়াহুড়া করে সম্পন্ন করতে চাচ্ছে এবং বিভিন্ন গ্যাস ফ্যাক্টরির কর্মকর্তারা কাজ নিয়মিত দেখাশোনা করছেন। যাতে ১৫ দিনের মধ্যে রাস্তার কাজ সম্পন্ন করেন।
১৩ কোটি টাকার সরকারি এই কাজে ৫ কোটি টাকার কাজ হচ্ছে বলে মনে হয় না। মান্দারীটোলা সাগর পাড়ে অবস্থিত বিএম গ্যাস ফ্যাক্টরি সহ ৬/৭ টি প্রতিষ্ঠান ও একটি স্বার্থন্বেষী মহল চাচ্ছে তাড়াহুড়ো করে নামকো আস্তে রাস্তার কাজ শেষ করতে।
জানা যায়, সীতাকুণ্ড উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রাম এ মান্দারীটোলা গ্রাম। বিশ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র এ রাস্তা। গত ১৫/১৬ বছর আগে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছিল। নির্মাণের ৫/৬ বছর পর, ১০-১২টি গ্যাস ফ্যাক্টরি বেড়িবাঁধের বাইরে এবং ভিতরে নির্মিত হয়।
ফ্যাক্টরির বড় বড় গাড়িগুলো দিনরাত চলাচলের কারণে রাস্তায়টি ভেঙে পড়ে। এরপর থেকে ওই গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে চলাচল করে আসছে। এ পর্যন্ত গাড়ির দুর্ঘটনা মান্দারীটোলা গ্রামের অনেক শিশু, বৃদ্ধ ও নারী সহ শতাধিক আহত হয়েছে এবং ইতিপূর্বে এক প্রবাসীর স্ত্রী ও দুই সন্তানের জননী ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছে।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের এলজিইডির অধীনে ১৩ কোটি টাকার এ প্রকল্পের এই কাজ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বাড়বকুণ্ড মান্দারীটোলা মহাসড়কের রাস্তা থেকে পশ্চিম দিকে প্রায় ৪ কিলোমিটার সাগর পাড়ের পানি রক্ষাবাঁধ পর্যন্ত এ সড়কের পুনঃসংস্কারের কাজ হওয়ার কথা। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজের শুরু থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্যাপক অনিয়ম ও নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে রাস্তার কাজ করে যাচ্ছে । যেখানে সরকারিভাবে কাজের টেন্ডারের সাইনবোর্ড থাকার কথা সেইটিও নেই। রাস্তার অনিয়মের কাজ জনপ্রতিনিধিরা ও সরকারি প্রকৌশলী এলজিডি কর্মকর্তারা দেখেও না দেখার ভান করছেন। যা দেখারও কেউ নেই। সিডিউল অনুযায়ী ১৮ ফুট সড়কে ঢালাইয়ের কাজ করার কথা। কিন্তু কোনদিকে ১২/১৪ ফুট দিয়ে ও রাস্তার মধ্যে থাকা বিদ্যুতের খাম্বা সহ ঢালাইয়ের কাজ করে যাচ্ছে এবং রাস্তার দুই পাশে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না বলে স্থানীয়রা জানান।
১৫ দিনের মধ্যে রাস্তার কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাড়াহুড়া করে নিন্মমানের ইট, কংক্রিট, বালু, রাবিসের গুঁড়া সহ রাস্তার মধ্যে থাকা বিদ্যুতের লাইনের খুঁটিসহ রাস্তা ঢালাইয়ের কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদাররা। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে রাস্তাটির কাজ মজবুত হচ্ছে না। ১৩ কোটি টাকা সরকারি বাজেট থাকার পরও ফ্যাক্টরির মালিকেরা গাড়ি দিয়ে তাদের মালামাল আনা নেওয়া করতে নিজেরাই বালু, ইট, সিমেন্টসহ বিভিন্ন মালামাল দিচ্ছন। যাতে ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হয়। বিষয়টি মানবজমিনকে নিশ্চিত করেন ঠিকাদার নুরুল আমিন। বিএম এলপিজি গ্যাস ফ্যাক্টরির ম্যানেজার শরিফ উদ্দিনের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাড়াহুড়া করে রাস্তার কাজ ১৫ দিনের মধ্যে শেষ করতে মালামালগুলো দিচ্ছেন।
পরে আবার অস্বীকার করে বলেন, তিনি কিছু জানেন না। সীতাকুণ্ড উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা ও ঊর্ধ্বতন এলজিইডি কর্মকর্তারা বিষয়টি ভালো জানেন বলে লাইন কেটে দেন।
নাম না দেওয়ার শর্তে অনিচ্ছুক এলপিজি গ্যাস ফ্যাক্টরির এক কর্মকর্তা বলেন, মান্দারীটোলা রাস্তা সরকারি বাজেটের টাকাগুলো দেরিতে পাবে বলে সিন্ডিকেটকে বিভিন্ন ফ্যাক্টরির থেকে বিভিন্ন মালামালগুলো দেওয়া হচ্ছে। পরে তারা বিল পেলে পরিশোধ করবেন বলেছেন তাই। রাস্তার কাজে হরিলুট ও অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকেদার নুরুল আমিন বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন করতে তাদেরকে বিভিন্ন গ্যাস ফ্যাক্টরি থেকে ইট, বালিসহ ঢালাইয়ের কাজের জন্য বিভিন্ন মালামাল দিচ্ছে। তার জন্য আমরা ঠিকাদাররা দায়ী নয়, তাছাড়া টেন্ডারে নিয়ম শুধু ঢালায়ের কাজ করে দেয়া।
সরকারি রাস্তার কাজে অনিয়ম ও হরিলুটের বিষয় জানতে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী গোলাম মো: মোস্তফা বলেন, কাজে কোন অনিয়ম হরিলুট হচ্ছে না। রাস্তার কাজের সরকারি টেন্ডারের তালিকাটির সাইনবোর্ড রাস্তায় লাগানো হয়নি কেন জানতে চাইলে এটি তার ভুল হয়েছে স্বীকার করেন।
মেজবাহ খালেদ / এন ই / সি আই ডি ;