নিউজ ডেস্ক । ।
কবে কার সঙ্গে সর্বশেষ দেখা হয়েছে, অনেকেই তা মনে করতে পারলেন না। দুরন্তপনার সেই কৈশোর ডিঙিয়ে যখনই জীবিকার ভার পড়েছে, তখনই সবাই ছুটেছেন যে যার গন্তব্যে। সময় পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে মানুষগুলো। কিন্তু স্মৃতিচারণায় কৈশোরের যে কথাগুলো উঠে এল, সেগুলো বড্ড চেনা। চোখে ভেসে ওঠে কৈশোরের চেনা মুখটিও।
‘এসএসসি ব্যাচ ৮৫, চট্টগ্রামে’র কল্যাণে সারাদেশের ২২০টি বিদ্যালয়ের প্রায় ৪২৫ জনের বেশি বন্ধু একসঙ্গে সারাদিন আড্ডা, খাওয়া, ছবি তোলা, নাচ, গানে মশগুল ছিল। ১৯৮৫ সালে এসএসসি পাস করা বন্ধুবান্ধব ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে। একই ব্যাচের এবং একই বয়সের নারী-পুরুষের এই জমজমাট মিলনমেলা ছিল ব্যতিক্রম। এখানে ছিল না কোনো অভিভাবক, এমনকি জুনিয়ররাও। ফলে নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় চমৎকার দিন উপভোগ করে সবাই। যেন হারিয়ে গেছে সেই ৯৩ সালে, যখন তাঁরা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল।
শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) নগরীর লাভলেইনস্থ স্মরণিকা কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো এসএসসি ‘৮৫ ব্যাচ, চট্টগ্রাম’র মিলনমেলা। ‘সাগরের বিশালতায় চলো ফিরি কৈশোরে’ শীর্ষক স্লোগানকে সামনে রেখে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ মিলনমেলায় সারাদেশ থেকে ৪ শতাধিক সদস্য অংশগ্রহণ করেন। সকালে অংশগ্রহণকারীদের নিবন্ধনের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়।
দুপুরে স্মরণিকা প্রাঙ্গণে বেলুন ও পেস্টুন উড়িয়ে মিলনমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। মিলনমেলার আহবায়ক আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠিত হয়।
কথা সাহিত্যিত বিচিত্রা সেন ও সামশুল কবির লিটনের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সদস্য সচিব জসিম উদ্দিন, শামীমা ফেরদৌস মিলি, আলমগীর কবির ও অন্যরা। আলোচনা শেষে সতীর্থ ও অতিথি শিল্পীদের নাচে-গানে মুগ্ধতা ছড়ায় মিলনমেলা। পরে নৈশভোজ শেষে আহবায়ক আবু সুফিয়ানের সমাপনি বক্তব্যের মাধ্যমে মিলনমেলার সমাপ্তি ঘটে।
মিলনমেলার আয়োজক ক্যাপ্টেইন আলমগীর কবির বলেন, এই বয়সে সাড়ে ৪শ মানুষ একত্রিত হওয়া আসলেই কঠিন ব্যাপার। কিন্তু তবুও সবাই এসেছেন। বাংলাদেশের সকল ৮৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের একত্রিত করার চিন্তা করেছিল ক্লাব ৮৫ এর এডমিন মাহাবুব। তবে চট্টগ্রামে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এবং এই আয়োজনের প্রথম চিন্তা করেন শামীমা ফেরদাউস মিলি। এরপর সবার চেষ্টায় আসলে আমরা আজ একত্রিত হই।
মিলনমেলার আয়োজক শামীমা ফেরদাউস মিলি বলেন, আমার একটি বন্ধুত্বের জয়গা দরকার ছিল, সেখান থেকেই মূলত এমন আয়োজন করা। আসলে আমি খুবই খুশি এমন আয়োজন করতে পেরে। খুবই ভালো লাগছে যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
অনুষ্ঠানের সদস্য সচিব এম এ এম জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা এসএসসি পাশ করি ১৯৮৫ সনে। তারপর দীর্ঘ সময় কেটে গেছে কেউ কারো সঙ্গে তেমন দেখাই হয়নি। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে অনেকেই এসেছেন আমাদের মিলনমেলায়। যাদের সাথে ভবিষতে কখনো দেখা হবে কি না জানি না, অনেকের সঙ্গে ইতিপূর্বে কখনো দেখাও হয়নি। কিন্তু আজ একবারের জন্যও মনে হয়নি তাদের সঙ্গে জীবনের প্রথম দেখা। আজ তাদের সবাইকে এক সঙ্গে পেয়ে সত্যি অনেক খুশি, আনন্দে আপ্লুত।
অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া ৮৫ ব্যাচের ছাত্রী নাজমা বলেন, গত দু’মাস ধরে এই আয়োজনের প্রস্তুতি চলছিল। একটু একটু করে আজ আমরা সবাইকে একত্র করতে পারলাম। আজকের এই মিলন মেলায় যুক্ত হতে পেরে এবং সবাইকে এক সাথে পেয়ে আমি অনেক আনন্দিত।
এদিকে সবাইকে এক সঙ্গে পেয়ে ঈদের চেয়েও বেশি আনন্দ লাগছে মন্তব্য করে সারাহ তানভি বলেন, এমন আয়োজন আমাদের প্রায়ই হয়। চট্টগ্রামে এমন আয়োজন দি¦তীয়বারের মতো হলো। গত বছরের চেয়েও এবার অনেক জাকজমকপূর্ণ হয়েছে সমস্ত আয়োজন।
মিলনমেলার আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা অনেকদিন ধরে বাংলাদেশের সকল বিদ্যালয়ের ৮৫ সালের ব্যাচকে একত্রিত করার চেষ্টা করছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ আমরা সফল। আজ সব বন্ধুদের আমরা একত্রিত করতে পেরেছি। সকল ব্যস্ততা ফেলে সব বন্ধু-বান্ধবিরা আজ এখানে একত্রিত হয়েছেন। এখানে অনেক নতুন বন্ধু এসেছেন কিন্তু আমার কাছে তাদের নতুন বন্ধু মনে হয়নি। মনে হচ্ছে তারা আমার অনেক দিনের পূরনো।
অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া শারমিলা চৌধুরী বলেন, আজকের আয়োজনের মধ্য দিয়ে ছোটকালের দুরন্তপণায় ফিরে গেলাম। সেই ছোট বেলার প্রতিটি স্মৃতি খুব স্মরণ করি। বন্ধুত্বের টানে ৮৫ এর যে মিলনমেলা এখানে আসতে পেরে সেই দুঃখ যেন কিছুটা কমতে লাগলো।
তিনি বলেন, মনে হচ্ছে ছোট বেলায় হারিয়ে গিয়েছি। এত চমৎকার একটি প্লাটফর্ম দাঁড়াবে এমন কখনোই কল্পনা করিনি। আজ সবার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে আমরা সেই ৮৫ সালেই ফিরে গেছি।
অনুষ্ঠানের আয়োজক নোয়েল কাদের বলেন, স্কুল জীবনে ঠিক যেমন ভাবতাম, বন্ধুরাই সব-বন্ধুরাই সব কিছু, আজকের অনুভূতি ঠিক তেমনই। এই বয়সে এসে স্কুল জীবনের বন্ধুদের ফেরত পেয়েছি বিষয়টি আসলেই খুব প্রাপ্তির।
স্কুল জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শামপা লোধ বলেন, আমাদের সময় নারীদের খুব একটা স্বাধীনতা ছিল না। আমরা তেমন মজাও করতে পারতাম না। যেমনটা এখনকার শিক্ষার্থীরা করে থাকেন। আমি যে বিদ্যালয়ে ছিলাম সেখানে সপ্তাহে একদিন অনুমতি মিলতো রঙিন কাপড় পরতে। আজকের দিনটি ঠিক তেমনই মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ইচ্ছে হয় সবকিছুর বিনিময়ে হলেও স্কুল জীবনে আবার ফিরে যেতে। ওই অকৃতিম সময়টিতে খুব ফিরতে ইচ্ছা করে। বিভিন্ন স্কুলের বিভিন্ন প্লাটফর্মের সবাই আজ যেন এক হয়ে দাঁড়িয়েছি। এই অনুভূতি ব্যাখ্যা করার আসলে কোন ভাষা আমার জানা নেই।
মেজবাহ খালেদ / এনই / সিআইডি ;