বৃহত্তর চট্টগ্রামের ২৩ আসনের মধ্যে ১৯ আসনেই নিজ দলের প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়নপত্র দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই ১৯ আসনের প্রার্থীদের মধ্যে ১৬ জনই বর্তমান এমপি। ৩জন এসেছেন নতুন ও তরুণ মুখ। অপরদিকে শরীকদের তিনটি আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র কক্সবাজার-৩ আসনে প্রার্থী কে তা এখনও স্পষ্ট করা হয়নি।
অনানুষ্ঠানিকভাবে গতকাল রোববার সারাদেশের সাথে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার ২৩ সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৯টি আসনে আওয়ামী লীগ দলের মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামে শরিক দলের জন্য ৩টি আসন (চট্টগ্রাম-৫, চট্টগ্রাম-২, চট্টগ্রাম-৮) ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে জাতীয় পার্টিকে চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী, তরিকত ফেডারেশনকে চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি এবং জাসদকে চট্টগ্রাম-৮ চান্দগাঁও বোয়ালখালী আসন দেয়া হয়েছে। এদিকে কঙবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনটিও জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলুর জন্য রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন যারা তারা হলেন, চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই আসনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, গৃহায়ণ ও পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম-৩ সন্দ্বীপ আসনে বর্তমান এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা, চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুণ্ড আসনে বর্তমান এমপি দিদারুল আলম, চট্টগ্রাম-৬ রাউজান আসনে বর্তমান এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৭ রাঙ্গুনিয়া আসনে বর্তমান এমপি ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ কোতোয়ালী আসনে একেবারেই নতুন চমক হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। চট্টগ্রাম-১০ ডবলমুরিং আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি ডা. আফছারুল আমিন, চট্টগ্রাম-১১ বন্দর-পতেঙ্গ আসনে বর্তমান এমপি এমএ লতিফ, চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া আসনে বর্তমান এমপি শামসুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৩ আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনে বর্তমান এমপি ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রাম-১৪ চন্দনাইশ আসনে বর্তমান এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে বর্তমান এমপি ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী, চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনে বর্তমান এমপি মোস্তাফিজুর রহমান দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।
এদিকে কঙবাজার-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম, কঙবাজার-২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি আশেক উল্লাহ রফিক, কঙবাজার-৩ আসনে বর্তমান এমপি সাইমুম সারোয়ার কমলের মনোনয়ন এখনো ঝুলে আছে। এ আসনটি মহজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলুকে দেয়ার জন্য চূড়ান্ত করে রাখা হলেও তিনি গতকাল পর্যন্ত এ আসন থেকে নির্বাচন রাজি না হওয়ায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কমলকেও চূড়ান্ত করা হয় নি। তবে আজ এ আসনে যে কোনো একজনকে আজ চূড়ান্ত করা হবে।
কঙবাজার-৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির স্ত্রী শাহিনা আক্তার চৌধুরী।
এদিকে বান্দরবান আসন থেকে আবারো মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি বীর বাহাদুর উসৈ সিং, খাগড়াছড়ি আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রাঙামাটি আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন দীপংকর তালুকদার।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন দলের মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে চিঠি দেওয়া হবে। গতকাল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের চিঠির সঙ্গে প্রত্যাহারের চিঠিতেও স্বাক্ষর নিয়ে রাখা হচ্ছে। তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে মহাজোটের শরিকদের নিয়ে একযোগে ৩০০ আসনের প্রার্থী ঘোষণা দেওয়া হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গতকাল ২৩০ আসনে প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ করেছে আওয়ামী লীগ। সম্ভবত বাকি ৭০ আসন পাচ্ছেন মহাজোটের প্রার্থীরা। এই ঘোষণা আজ সোমবার দেয়া হবে।
এদিকে মনোনয়নের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই কর্মী-সমর্থকদের মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। বিভিন্ন এলাকায় তাৎক্ষণিক মিছিল, মিষ্টি বিতরণের খবরও পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম ৯ আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জননেতা ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল নৌকার প্রার্থী মনোনীত হওয়ায় এনায়েত বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ লীগের যৌথ উদ্যোগে ওমরগণি এমইএস কলেজের সাবেক সহ-সভাপতি রাজীব দত্ত রিংকুর নেতৃত্বে তাৎক্ষণিক মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল বের করা হয়। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন আইনুল ইসলাম চৌধুরী আবেদ, সঞ্জয় ভৌমিক কংকন, এএম কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, নাছির উদ্দিন ফাহিম, প্রমুখ। বক্তারা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগামী ৩০ ডিসেম্বর জননেতা মহিবুল হাসান চৌধুরী নোফেলকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।
রাউজানে আনন্দ মিছিল : রাউজান প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম-৬ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী নিশ্চিত হওয়ার পর আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। যুবলীগ ছাত্রলীগ রাউজান রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাই সড়কে আনন্দ মিছিল করে নৌকার পক্ষে জয়ধ্বনী দেয়। উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক পথে অনেকেই জটলা করে দাঁড়িয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের হাতে মিষ্টি তুলে দিতে দেখা গেছে। তারা নৌকা মার্কায় ফজলে করিম চৌধুরী পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন দলিয় প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র হাতে পাওয়ায় নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহে বিশেষ শোকরানা মুনাজাত করেছেন। উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের অর্থ সম্পাদক রাউজান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এহেছানুল হায়দর চৌধুরী বলেছেন ৭৫ পরবর্তী সময় থেকে আওয়ামীলীগের হাত ছাড়া ছিল রাউজান আসনটি। ২০০১ সালে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী মাধ্যমে আসনটি উদ্ধার করে দলের জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে। এই আসন থেকে তিনি তিনবার বিজয়ী সাংসদ।
সীতাকুণ্ডে মিষ্টি বিতরণ : সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, সকল গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আবারও নৌকার টিকেট পেলেন বর্তমান সংসদ আলহাজ্ব দিদারুল আলম। মনোনয়ন নিশ্চিতের খবরে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় তার অনুসারী দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে আনন্দ, উল্লাসের সৃষ্টি হয়। এসময় নেতাকর্মীরা একে অপরকে মিষ্টি মুখ করিয়ে আনন্দকে ভাগ করে নেন। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে সীতাকুণ্ডের সাংসদ নির্বাচিত হন দিদারুল আলম।
লোহাগাড়ায় উল্লাস : লোহাগাড়া প্রতিনিধি জানান, প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী মনোনয়ন লাভ করেছেন -এ খবর লোহাগাড়ায় পৌঁছলে একদল উৎসাহী তরুণ উল্লাস মিছিল বের করে। তারা বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে ও বাজি ফাটিয়ে উল্লাস প্রদর্শন করেছে। মিছিলটি লোহাগাড়া উপজেলা সদর ও বটতলী মোটর স্টেশন প্রদক্ষিণ করে।