অনলাইন ডেস্কঃ কবি শামসুর রাহমান বলেছিলেন- ‘ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা, এবার আমি গোলাপ নেব। ’ গোলাপে আছে কাঁটার ভয়। তবুও যুগ যুগ ধরে দেশে দেশে প্রিয়জনের হাতে গোলাপ তুলে দিয়ে আসছেন প্রেমিক যুগল। কেবল এক গোলাপই প্রিয়জনের মান ভাঙানো থেকে শুরু করে যেকোনো উপলক্ষে জাদুর মতো কাজ করে।
গোলাপের এই জাদুকরী আবেদনের কথা মাথায় রেখে ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে গোলাপ দিবস।
বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারে একের পর এক ‘ফুল’ ফুটিয়ে গেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ। তার লেখায় যদিও গোলাপের সঙ্গে উঠে এসেছে কাঁটাও। বিশ্বকবি লিখেছেন- ‘গোলাপ ফুল ফুটিয়ে আছে, মধুপ, হোথা যাস নে, ফুলের মুধু লুটিতে গিয়ে, কাঁটার ঘা খাসনে‘।
তবে বিশ্বকবি যতই কাঁটার আঘাতের ভয় দেখান না কেন, গোলাপ নিয়ে মাতামাতি কিন্তু থেমে নেই। থেমে নেই গোলাপ নিয়ে ব্যাকুলতা। তাইতো মহাদেব সাহা লিখেছেন- ‘কিন্তু কী করে বলবো এইসব মেঘ দেখার দুঃখ, এইসব গোলাপ দেখার ব্যাকুলতা’।
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতাতেও উঠে এসেছে গোলাপ। পরতে পরতে বিষণ্নতা মাখিয়ে কবি লিখেছেন- ‘অনেক নিমেষ অই পৃথিবীর কাঁটা গোলাপ শিশিরকণা মৃতের কথা ভেবে তবু আরো অনন্তকাল বসে থাকা…।'
কবি রফিক আজাদের কবিতায় বারবার উঠে এসেছে গোলাপের কথা। গোলাপকে কবি স্মরণ করতে চেয়েছেন মৃত্যুর মতো শাশ্বত সত্যের সঙ্গে। কবির ভাষায়- ‘গোলাপ ফুটুক এক- নিঃসঙ্গ করুণ এবং আমার চেতনার সেই বিশুদ্ধ গোলাপ, মৃত্যুর মতন চিরস্মরণীয় হোক।
’রকিফ আজাদের কাছে গোলাপ মৃত্যুর মতো স্মরণীয় হলেও কবি বুদ্ধদেব বসুর ভাষায় গোলাপ এক স্বপ্নের নাম। সেজন্যই তার কলমে ফুটে উঠেছে গোলাপের মহিমা- ‘গোলাপের বর্ণে-বর্ণে স্বপ্ন-সুধা মাখা’।
এদিকে কবি রাকিবুল হায়দারের কাছে গোলাপ অমর, চিরন্তন। তার কবিতাতেও ফুটে উঠেছে নশ্বর পৃথিবীতে ‘অবিশ্বর’ গোলাপের গুণগান, ‘গোলাপের কোনো মৃত্যু হয় না, যেমন হয় না প্রেমিকের, তাই শত অবহেলায়ও তারা ঠিক ফিরে আসে-নতুন এক আশাবাদের মিছিল নিয়ে, যেখানে প্রেমিক দাঁড়িয়ে থাকে গোলাপ হাতে, আর গোলাপ অপেক্ষা করে আবার এক গোলাপ জন্মের!’
তাই আবার এক গোলাপ জন্মের জন্য অপেক্ষা না করে সুবাস আর সৌন্দর্য ছড়াতে থাকুক গোলাপ। শুধু গোলাপ দিবস নয়, যেকোনো সময়ই- কাঁটার ভয় তুচ্ছ করে প্রিয় মানুষের হাতে তুলে দিন একগুচ্ছ গোলাপ।