অনলাইন ডেস্কঃ
বসন্তের এ সময়টায় আমার মতো প্রায় সব প্রবাসীদেরই মনে করিয়ে দেয় ফাল্গুনের সেই মৃদুমন্দ হাওয়া আর ভালোবাসার সেই দিনগুলোর কথা।
রঙ্গমঞ্চে জীবনের প্রবেশ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন, এখন অপেক্ষা প্রস্থানের। স্বপ্ন আর ভালোবাসা নিয়েই মানুষ বাঁচে। জীবনের এই রঙ্গমঞ্চে আমরা প্রতিদিনই কত না কত সমস্যার সম্মুখীন হই আবার সেখান থেকে যখন বেরিয়ে আসি-তখন জীবনকে এক অন্যরকম বর্ণিল মনে হয়। জীবনের প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসাই মানুষকে সামনে এগিয়ে নেয়— আর এটাই জীবন।
প্রবাস জীবন স্বদেশের মানুষের চিন্তা ও কল্পনার থেকেও অনেক কঠিন। এখানে জীবন কখনো কখনো ঘড়ির কাঁটার আগেই চলে। অবিচ্ছেদ্য বাঁধনে চিরায়ত স্নেহ মমতা আর ভালবাসার ভান্ডার খুুঁজে পাওয়া খুবই দূরহ ব্যাপার। হৃদয়ের রক্তক্ষরণ জমা হয়ে থাকে, বের হয় না। ইচ্ছে করলেই বাস বা ট্রেনে চড়ে বাড়ি যাওয়া যায় না।
পাহাড়ের পাদদেশ, বৃক্ষের ছায়ারাজি, ঝর্ণাধারা আর বরফাচ্ছন্ন কানাডার প্রবাস জীবনে বসন্ত আর ভালোবাসা কেবলমাত্র মনের, একান্তই নিজের। প্রাত্যহিক জীবনে কল্পনার মন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং খুদে বার্তাগুলো প্রবাস জীবনে সারাক্ষণ দেশের মায়া বয়ে বেড়ায়। তবুও সুদূর প্রবাসে বসে গ্রামের রাস্তার আঁকাবাঁকা পথ আর ফেরিওয়ালাদের ডাক শুনতে কার না মন চায়?
ভালোবাসা চিরন্তন। কোন দিবসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এ ভালোবাসা শুধু প্রেমিক প্রেমিকা নয়, হতে পারে মা-বাবা আত্মীয়-স্বজন যে কারো জন্যই। অনেকেই মানবসেবার প্রত্যয় নিয়ে ভালোবাসা বিলিয়ে দিচ্ছেন দিনের পর দিন।
সম্রাট শাহজাহান ভালোবেসে মমতাজের জন্য তাজমহল তৈরি করেছিলেন। কথিত আছে; তাজমহলটি তৈরিতে ২০ হাজার শ্রমিকের ২০ বছর সময় লেগেছিল। ভালোবাসার এই অপূর্ব উপহার দেখতে হাজার হাজার দর্শনার্থীদের ভিড় পড়ে দিল্লির আগ্রায়।
অনেকেরই আবার স্বপ্ন থাকে ভালোবাসার এই নিদর্শনটি দেখার। কবি-সাহিত্যিকরা তাজমহল নিয়ে হাজার হাজার কথা লিখেছেন। অনেকেই মনে করেন ভালোবাসা নয়, ভেতরের অনুতপ্তবোধ থেকেই সম্রাট শাহজাহান তাজমহল নির্মাণ করেছেন। অনুতপ্তবোধ কেন? সম্রাট শাহজাহান কি মমতাজকে ভালোবাসতেন না? নাকি অন্য কিছু?
লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রোমিও-জুলিয়েটসহ প্রেম-ভালোবাসার এ রকম অনেক নিদর্শন আমাদের ইতিহাসের পাতায়। অতিরিক্ত আবেগ আর ভালোবাসা থেকে যেমন তৈরি হতে পারে তাজমহল তেমনি অঙ্কুরেই বিনাশ হয়ে যেতে পারে অনেক কিছুই। জীবনটা তো আর থেমে থাকবে না?
বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হকের "খেলারাম খেলে যা" প্রসঙ্গে এক জায়গায় বলা হয়েছে ‘যে তরুণ-তরুণী অল্প বয়সে এই উপন্যাস পড়ে লজ্জা অনুভব করত তারা এখন পরিণত বয়সে এর ভেতরে খুঁজে পান মানব জীবনের গভীর দার্শনিকতা। অস্তিত্বের রহস্যময়তা ও স্রোতের মতো ভেসে যাওয়া বেদনাহত জীবন।
বসন্ত আসে, বসন্ত যায়, কোকিলের কুহু কুহু ডাক আর প্রকৃতির ফাগুনের ছোঁয়ায় হৃদয়ে ভালোবাসা জাগালেও সোনালি অতীত আর ফিরে আসে না। হৃদয় মাঝারে তবে দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না!!