বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত হয়েছে আজ। বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বক্তারা বলেন,‘প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্রের কাছ থেকে পাঁচটি অধিকার দাবি করতে পারে : খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা। এগুলো একজন মানুষের মৌলিক চাহিদা। আবার এগুলো তার মৌলিক অধিকারও। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল নাগরিকদের জন্য এ অধিকারগুলো পাওয়া নিশ্চিত করা। ’আমাদের দেশে প্রতিবন্ধীদের প্রাপ্য অধিকার, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণের প্রাপ্য স্বীকৃতি ও মর্যাদা এখনও বহুলাংশে অর্জিত হয়নি। সমাজে, দলিত মানুষের অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হলেও এখনও তা কাক্সিক্ষত মাত্রার ধারেকাছে নয়। সাধারণভাবে মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন হয়েছে একথা সত্য। আয়ে বৈষম্য বৃদ্ধির মধ্যেই দারিদ্র্য হ্রাসের ধারাও অব্যাহত আছে। তারপরও ছিন্নমূল মানুষ, বস্তিবাসীর দৈনন্দিন জীবনে তার ছোঁয়া কমই লেগেছে। প্রায় পাঁচ কোটি তরুণ কর্মসংস্থানহীন। উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে কৃষক এখনও অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত। দেশের বেশির ভাগ মা ও শিশু পুষ্টি বঞ্চিত। পরিবারে কন্যাশিশু এখনও বৈষম্যের শিকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনন্দের মাধ্যমে অনুকূল পরিবেশে শিক্ষা লাভের অধিকার থেকে শিশু এখনও বঞ্চিত। প্রাথমিক ও পরবর্তী স্তরগুলোতে পাঠদানকারী শিক্ষকের বেতনভাতা একই যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার অধিকারী সমাজের অন্য পেশার মানুষের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এখনও বেসরকারি স্কুল-কলেজে অনেকে বছরের পর বছর বিনা বেতনে পাঠদান করছেন ভবিষ্যতের আশায়। অন্যদিকে একই শ্রমদান সত্ত্বেও নারী শ্রমিকের পারিশ্রমিক পুরুষের তুলনায় কম। চা-শ্রমিক, চাতাল শ্রমিকের করুণ অবস্থা। নির্মাণ শ্রমিকরা কাজ করেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো স্থানে তাদের মৃত্যু হয়। কিন্তু বেতন ও ভাতায় নারী ও পুরুষ শিক্ষকের মধ্যে বৈষম্য না থাকলেও কর্মস্থলে ও পরিবারে নারী শিক্ষকের নিরাপত্তা এবং তার প্রাপ্য শারীরিক ও মানসিক অনুকূল পরিবেশের অনুপস্থিতি এমনকি জীবনের ওপর হুমকির ঘটনাও লক্ষণীয়। কন্যাশিশু ও মেয়ে শিক্ষার্থী উত্ত্যক্তের ঘটনা কমেছে বলা হলেও মাঝে মধ্যে এমন এমন ঘটনা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় উঠে আসে যা রীতিমতো রোমহর্ষক। একই সঙ্গে মানুষের সীমাহীন অর্থলোলুপতা ও নিষ্ঠুরতা অতীতের সব দৃষ্টান্ত ও রেকর্ডকে অতিক্রম করে গেছে। এ পরিস্থিতিতে সংকটের গভীরে প্রবেশ করা আবশ্যক। একই সঙ্গে সবার সচেতনতা বৃদ্ধি ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের ওপর জোর দেয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত বিপুল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়ে মানবাধিকার রক্ষায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মানবতার এ অনন্য নিদর্শন স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধি প্রদান করা হয়েছে।বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে মানুষ একদলীয় স্বেচ্ছাচারী শাসন, গোষ্ঠী, বর্ণ ও জাতিগত সংঘাতে অবলীলায় খুন ও গুপ্তহত্যার শিকার হচ্ছে। অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। দেশের সব নাগরিকের বিশেষ করে শিশু ও নারীর মানবাধিকার রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার জন্য জনগণের মিলিত কণ্ঠের আওয়াজ তুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পাশাপাশি মানবাধিকার সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান,জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী, সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যম, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। উপরোক্ত আলোচনা সভার বক্তারা। দিবস উপলক্ষে অদ্য ১০ ডিসেম্বর সকাল ১০.০০ টায় জার্নালিষ্ট সোসাইটি ফর হিউম্যান রাইটস এন্ড ওয়েলফেয়ার চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি মো. আবদুল আজিজ এর সভাপতিত্বে জাতির শান্তি ও অগ্রগতি এবং মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদদের আত্মার শান্তি, আত্মার মাগফেরাত কামনায় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ও প্রধান বক্তা ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়ন সৈয়দ আবদুল গণি। বিশেষ অতিথি ছিলেন এড. এহচানুল হক,এড.নাছির উদ্দিন, এড.জসীম উদ্দিন, এড. জি এ এম শহিদুল ইসলাম, এড. মো. আজগর আলী, এড. জাহাঙ্গীর আলম। জার্নালিষ্ট সোসাইটি ফর হিউম্যান রাইটস এন্ড ওয়েলফেয়ারের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন এর পরিচালনায় আলোচনার শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, মিন্টু কুমার নাথ, হারুনুর রশীদ, কামাল উদ্দীন , কাজী মো. জামাল উদ্দিন, এম. এ রহমান, নুর নাহার বেগম, মো. নাছির উদ্দিন, মো. সেকান্দর মিয়া, মো. মাসুদ আকতার, মো. সোহেল সরোয়ার সুমন, আবদুল মাবুদ, মো. হোসাইন, মো. কামরুল হাসান, মো. বোরহান উদ্দিন, মো. জাকারিয়া মাসুদ, কাজী মাওলানা জাকের হোসেন, আকতারুল ইসলাম, মো. রিদোয়ানুল হক, রাশেদা বেগম, ফাতেমা বেগম, মো. নাজিম উদ্দিন, এম. আমিন উল্লাহ, শেখ খালেদ মেজবাহ উদ্দীন প্রমুখ। অনুষ্ঠান শেষে মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদদের আত্মার শান্তি, আত্মার মাগফেরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে বিশেষ মোনাজাত হয়।