অনলাইন ডেস্কঃ
জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপকে ঘিরে বিজ্ঞানী ও মহাকাশ বিষয়ে আগ্রহী মানুষের মধ্যে উৎসাহের শেষ নেই। এক গবেষক ও তার টিম একেবারে প্রথম পর্যায়ে সেই টেলিস্কোপ কাজে লাগানোর সুযোগ পাচ্ছেন।
ডোমিনিকা উইলেসালেক প্রায় সবার আগে নতুন টেলিস্কোপ নিয়ে পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। মহাকাশে নতুন সুপার টেলিস্কোপ প্রস্তুত হবার ঠিক পরেই বাছাই করা যে ১৩টি টিম সেটি ব্যবহার করতে পারে, তিনি সেগুলির মধ্যে একটির সদস্য।
ডোমিনিকা বলেন, ‘‘সত্যি জ্যোতির্বিদ্যা চর্চা শুরু করলে এবং খালি চোখে দেখা রাতের আকাশ যে মহাকাশের ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ, সেটা আরও ভালো করে বুঝতে পারলে সম্পূর্ণ ভিন্ন উপলব্ধি হয়। সে বিষয়ে নতুন করে সচেতন হলে এখনো আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। ’’
ডোমিনিকা গ্যালাক্সির মধ্যভাগে বিশাল ভরসম্পন্ন ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর সম্পর্কে বিশেষভাবে আগ্রহী। ম্যাটার বা পদার্থ গিলে নিলে সেই গহ্বর থেকে শক্তিশালী বাতাস বিকিরণ হয়।
সেই বাতাস গ্যালাক্সির মধ্যে নক্ষত্রের জন্ম প্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে, আবার প্রক্রিয়া বন্ধও করতে পারে বলে তিনি জানালেন।
গ্যালাক্সির বিকাশের ক্ষেত্রে ব্ল্যাক হোলের ভূমিকা জ্যোতির্বিদ্যার অন্যতম মৌলিক প্রশ্ন। এ প্রসঙ্গে ডোমিনিকা উইলেসালেক বলেন, ‘‘বিশাল ভরসম্পন্ন কৃষ্ণ গহ্বর ও সেটির আশ্রয়দাতা গ্যালাক্সির আয়তন তুলনা করলে বোঝা যাবে সেই পার্থক্য কত বড়। অনেকটা ধাতুর তৈরি পয়সার সঙ্গে চাঁদের আয়তনের তুলনার মতো।
তা সত্ত্বেও সক্রিয় বিকাশের সময় বিশাল ভরসম্পন্ন ব্ল্যাক হোল গ্যালাক্সির উপর বিশাল প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
’’কীভাবে ব্ল্যাক হোল সেই প্রভাব রাখে, জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে ডোমিনিকা তা বুঝতে চান। কারণ আমরাও তো মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতে বাস করি।
মহাকাশে নতুন টেলিস্কোপ সেই গ্যালাক্সিগুলিকে আরও নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলবে। ১,২০০ কোটিরও বেশি বছর ধরে সেগুলোর আলো মহাকাশ ভেদ করে এগিয়ে চলেছে।
এমন এক সময়ে সেই আলোর বিকিরণ ঘটেছিল, যখন ব্ল্যাক হোলগুলি আরও বেশি ম্যাটার গিলে নিতো ও শক্তিশালী বাতাস বিকিরণ করতো। চারিপাশের পরিবেশের উপর তার প্রভাব টেলিস্কোপে ধরা তথ্যের মাধ্যমে জানা যাবে।
হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়র গবেষক ডোমিনিকা উইলেসালেক বলেন, ‘‘সেই তথ্য শুধু মহাকাশের একটি অংশের ছবির মতো দ্বিমাত্রিক হবে না, বরং থ্রিডি তথ্য পাওয়া যাবে। অর্থাৎ সেই ছবির প্রতিটি পিক্সেলের পেছনে একটা স্পেকট্রাম লুকিয়ে রয়েছে। ’’
দূরের গ্যালাক্সিতে ঠিক কত পরিমাণ গ্যাস আছে, স্পেকট্রাম তা দেখিয়ে দেবে। গ্যালাক্সির গতিবেগ, গতির দিকও জানা যাবে। সেই সব তথ্যের ভিত্তিতে গ্যালাক্সির বিবর্তন প্রক্রিয়া আরও ভালোভাবে বোঝা সম্ভব হবে।
ক্যামেরার মধ্যে বসানো ফিল্টার হুইলের সাহায্যে ডোমিনিকা দূরের গ্যালাক্সি পরীক্ষা করবেন। জার্মানির মাক্স-প্লাংক জ্যোতির্বিদ্যা ইনস্টিটিউটে সেটি তৈরি করা হয়েছে। সবাই অধীর আগ্রহে সেই যন্ত্রের প্রয়োগের জন্য অপেক্ষা করছে।
১৪ বছর ধরে এই অভিযান বার বার পিছিয়ে দিতে হয়েছে। ডোমিনিকা এবার সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। ডোমিনিকা মনে করেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। কারণ সেই তথ্যের সাহায্যে আমরা যা তুলে ধরবো, জানতে পারবো, অন্যান্য জ্যোতির্বিদদেরও তা জানানো উচিত। জেমস ওয়েব সত্যি কী করতে পারে, তা বলতে পারি। তাই খুব ভালো প্রস্তুতির প্রয়োজন। ’’
মহাকাশে চূড়ান্ত অবস্থানে পৌঁছতে এবং পুরোপুরি সক্রিয় হতে টেলিস্কোপটিকে ধাপে ধাপে অংশগুলো খুলে ধরতে হয়েছে।
নড়াচড়া করতে পারে, এতগুলো এমন অংশ নিয়ে এর আগে কোনো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়নি। সবকিছু মেলে ধরতে দুই সপ্তাহ সময় লেগেছে। কোথাও কোনো ভুলত্রুটির অবকাশ ছিল না। উৎক্ষেপণের ছয় মাস পর সেই টেলিস্কোপ প্রাথমিক তথ্য সরবরাহ শুরু করছে।