পুরো অনুষ্ঠানই ছিল আকর্ষণীয়
আসছে দূষণখেকো বাড়ি

শিল্পী সুজিত মোস্তফার একক গানের অনুষ্ঠান দিয়ে শুরু করব এবারের টিভি সমালোচনা। দেবলীনা সুরের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচারিত হলো ১৮ মে সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে এনটিভিতে। অনুষ্ঠানের নাম ‘ছুটির দিনের গান’। শিল্পী সুজিত মোস্তফা মূলত নজরুলসংগীত শিল্পী। এ দিন রমজানের প্রথম দিন হওয়ায় তিনি অধিকাংশই গেয়েছেন নজরুলের ইসলামি ভাবধারার গান। যেমন: ‘খোদার প্রেমে শরাব পিয়ে’, ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ’, ‘খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে’ ইত্যাদি। পাশাপাশি দর্শকের অনুরোধে তিনি নজরুলের কালজয়ী প্রেম এবং বিচ্ছেদের গানও গেয়েছেন। যেমন: ‘আলগা করগো খোঁপার বাঁধন’, ‘তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়’, ‘শূন্য এ বুকে পাখি মোর আয়’ ইত্যাদি। তাঁর কণ্ঠ এবং পরিবেশনা দুই-ই ছিল গতানুগতিকতার বাইরে। চমৎকার সুরেলা কণ্ঠ তাঁর। সুরের উঁচু-নিচু সব পর্দায় তাঁর কণ্ঠ সাবলীলভাবে ওঠানামা করছিল। পরিচিত সুরই যেন খুঁজে পাচ্ছিল নতুন মাত্রা। অনুষ্ঠানের শেষ গানটি ছিল ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানি’। এ গানে তাঁর কণ্ঠের খেলা যেন দর্শকহৃদয়ে সুরের আবেশ ছড়িয়ে দিয়েছে। আর সেই সুরের রেশ অনুরণিত হয়েছে আরও বহুক্ষণ। তবে, তাঁর উপস্থাপনায় মাঝে মাঝে কিছুটা অস্থিরতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ছাড়া পুরো অনুষ্ঠানই ছিল আকর্ষণীয়। শ্রোতা-দর্শকের কাছে তিনি যে কতটা আদৃত ও জনপ্রিয়, তা বোঝা যাচ্ছিল সরাসরি তাঁদের ফোনে কথোপকথনের মাধ্যমে। আমরা শিল্পীর উত্তরোত্তর সাধনা ও সাফল্য কামনা করি।

এবারে টেলিছবি ও নাটক। ১৭ মে রাত ১১টায় এটিএনে প্রচারিত হলো টেলিছবি কিঞ্চিৎ সমস্যা। ফেরারি ফরহাদের রচনায় টেলিছবিটি পরিচালনা করেছেন সঞ্জীব দাশ। অভিনয় করেছেন তানজিন তিশা, ফারহান আহমেদ প্রমুখ। টেলিছবির শুরুতে দেখা যায় সিফাত ও পারু সুখী নবদম্পতি। তাদের সুখের জীবনযাপনের মাঝে হঠাৎ দেখা যায় সিফাত কাঠ-কাঠালির কথা শুনছে। ঘরের দরজা, আসবাব সিফাতকে নির্দেশ দিচ্ছে, ধমকাচ্ছে। ধীরে ধীরে তাদের জীবনে নেমে আসছে অশান্তি। এভাবে একপর্যায়ে দেখা যায় বাসার আশ্রিত বোন শিউলি, তাঁর স্ত্রী—সবাই কাঠ-কাঠালির কথা শুনতে পাচ্ছে। বৃক্ষের অন্তর্জ্বালা ফুটে উঠছে ঘরের দরজা ও আসবাবের কণ্ঠে। তখন দেখা যায়, সবাই ভীত হয়ে বনে গিয়ে বৃক্ষকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করছে।

এক কথায় বলা যায়, টেলিছবির বক্তব্যটি হৃদয়ছোঁয়া; কিন্তু গল্পটি সেভাবে হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি। যেভাবে সিফাতকে ঘরের দরজা ও আসবাবের কণ্ঠ শোনানো হয়েছে, তা কখনো রূপকথার মতো, কখনো বা কৌতুক গল্পের মতো মনে হয়েছে। বক্তব্যটি সিফাতের বোধ বা উপলব্ধির মাঝে নিয়ে গেলে গল্পটি হয়তো ভিন্ন মাত্রা পেতে পারত, কিন্তু বাস্তব জীবনে সবার মাঝে চলতে-ফিরতে সে কাঠ-কাঠালির কথা শুনছে, এটা দর্শকের কাছে বাস্তবসম্মত মনে হয়নি। কখনো কখনো হাস্যকরও মনে হয়েছে। তবে এটি অনস্বীকার্য যে, বক্তব্যটি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। গল্প ও ঘটনাবিন্যাস বাস্তবসম্মত ও যুক্তিপূর্ণ করে তুলতে পারলে হয়তো টেলিছবিটি হতে পারত একটি সার্থক নির্মাণ।

শেষে নাটক। একুশে টিভিতে ১৮ মে রাত ১০টায় প্রচারিত হলো সাপ্তাহিক নাটক মৃত্যু ও জোনাকির ঝিলমিল। রচনা ম ম র রুবেল ও পরিচালনা নাজমুল রনি। অভিনয়ে সজল, নাদিয়া খানম প্রমুখ। নাটকে দেখানো হয় মনোরোগে আক্রান্ত সজল যা স্বপ্নে দেখে, তা-ই বাস্তবে ঘটে যায়। একদিন রাগের বশে সজল চাকরি ছেড়ে বেকার হয়। তারপর স্বপ্ন দেখে তার প্রেমিকা নাদিয়া রাতে বাড়ি ফেরার পথে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে। সজল ভোরে ছুটতে ছুটতে নাদিয়াদের বাসায় এসে দেখে, সত্যিই সে গত রাতে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিল। এরপর বোনের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে সজল মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে যায়। শেষে ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। অবশেষে ডাক্তারের চেষ্টায় তার জ্ঞান ফেরে এবং অল্পদিনেই সে সুস্থ হয়ে উঠবে—এ আশ্বাসের মধ্য দিয়ে শেষ হয় নাটক।

এ নাটকটি সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়, দুর্বল ও অবাস্তব গল্প। সজলের অসুস্থতা এবং তার স্বপ্নের বাস্তবতা যুক্তিপূর্ণ করে তুলতে পারেননি লেখক ও নির্মাতা। আর অবাস্তব গল্প কখনো দর্শক মনে ঠাঁই পায় না। অন্যদিকে নাটকের সংলাপ এবং অভিনয়ও মানসম্পন্ন মনে হয়নি। বিশেষ করে সজলের অতি অভিনয় কখনো কখনো হাস্যকরও মনে হয়েছে। আশা করি এ বিষয়ে তিনি ভবিষ্যতে সজাগ হবেন। শেষে নাটকের নামকরণ সম্পর্কে বলব, কাব্যিক নামই হয় আকর্ষণীয়। তবে মৃত্যু ও জোনাকির ঝিলমিল নামটি হয়ে গেছে নাটকের বক্তব্য ও বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কহীন, অতি কাব্যিক।